ফজলে রাব্বী মিয়া দুই ছেলের পাশে সমাহিত হলেন

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়ার জানাজা শেষে সাঘাটা উপজেলার মরহুমের গটিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রী ও অকাল প্রয়াত দুই ছেলের পাশে দাফন কড়া হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় এলাকার শোকার্ত হাজার হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আজ সোমবার দুপুর ২টায় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহ তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের হেলেঞ্চা মাঠে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অবতরণের পর প্রথম জানাজার জন্য ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। এই স্কুলটি ফজলে রাব্বীর শৈশব ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গ্রহণের স্মৃতি বিজড়তি। সেখানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
গার্ড অব অনার শেষে মরহুমের প্রথম জানাজা ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এই জানাজায়। জানাজা শেষে মরহুমের কফিনে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আওয়ামী লীগ, সাত উপজেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগের সরকারি দপ্তর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ীসহ সর্বশ্রেণির মানুষ ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর মরহুমের নিজ বাড়ি গটিয়া গ্রামে আছর নামাজ পূর্বে দ্বিতীয় জানাজা এবং বাদ আছর সেখানে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানসহ আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা, বিচারপতি খুরশিদ আলম খুশি এবং জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, নাছিরুল আলম স্বপন, জিএম সেলিম পারভেজ, মরহুমের মেয়ে ফারজানা বুবলী, ছোট ভাই মো. ফরহাদ রাব্বীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী বক্তব্য রাখেন।


তার মেয়ে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা বুবলী কান্নায় ভেঙে পড়ে তার বাবার জন্য সকলের দোয়া ও ভালোবাসা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, তার বাবা সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবার নির্দেশ দিতেন। তাদের পরিবার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ধারার রাজনীতির একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে কাজ করবে।
২০২১ সালের জুনে তাঁর পেটে টিউমার অপারেশনের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য আগস্ট মাসে তাকে ভারত এবং পরে সেখান থেকে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নয় মাস সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই রাত ২টায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। ১৯৬১ সালে তিনি গাইবান্ধা কলেজে ভর্তি হন। তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ফজলে রাব্বী মিয়া আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করাকালীন রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।

১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভের পর ১৯৮৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন। ফজলে রাব্বীর চাচা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ চালু করলে ফজলে রাব্বী সে সময় অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন চাচার মাধ্যমে মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া ১১ নং সেক্টরে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি সপ্তমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং দশম ও একাদশ সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।