প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ক্রেতা হয়ে যান তাদের
বয়স আশি ছুঁইছুঁই। ঠিকমতো নড়তে চড়তে পারেন না। কথা অস্পষ্ট। বাজারের এক কোণে বসে থাকেন সামান্য কিছু পণ্য সামগ্রী নিয়ে। আশা, যদি কেউ কিনে নেন তবে এক বেলার খাবার জুটে যাবে। এমনই একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারে। দুই ছেলে নিজেদের সংসার নিয়ে থাকে। বৃদ্ধ বাবাকে ভাত দিতে তাদের বিরাট অনীহা। বৃদ্ধ বাবা মানুষের কাছে ভিক্ষা করে খাওয়ার চেয়ে তারা পণ্য বিক্রি করে জীবন যাপন করতে চান।
আধুনিক যুগের সুপারশপে দামদর করে পণ্য কেনার কোনো সুযোগ নেই। অনেকে দামদরের ঝামেলা এড়াতে এসব সুপারশপে গিয়ে থাকেন। তবে যারা দামদর করে বাজার করার মজা নিতে চান, তাদেরকে তো কাঁচাবাজারে যেতেই হবে। এই কাঁচাবাজারেই পেয়ে যাবেন এমন কিছু মানুষ, যারা ভিক্ষা চায় না। তারা চায় কেউ তাদের পণ্য কিনুক। এসব বিক্রি করে তারা বড়লোক হয়ে যাবে না, বড় ব্যবসায়ীও হয়ে যাবে না, মাত্র একবেলার খাবার হয়তো জুটবে। রাজধানীর প্রায় সব বাজারেই এমন মানুষের দেখা পাওয়া যায়।
এদের কেউ এসেছেন শহরতলীর কোনো গ্রাম থেকে। মাথা গোঁজার একখণ্ড জমিতে হয়তো একটি লেবু গাছ আছে। কারও বাড়িতে হয়তো দুটি কলাগাছ আছে। সেটি থেকে ফল তুলে এনে বাজারে বিক্রি করেন। কেউ আবার কারওয়ান বাজারে রাতের বেলায় পণ্য আনলোড করার সময় উপস্থিত হন। আনলোডের সময় কিছু পণ্য ছিটকে যায় এদিক-ওদিক। সেগুলো জড়ো করতে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বসে থাকেন এই গরীব মানুষগুলো। সকালে বাজারে বিক্রি করতে পারলে জুটবে কিছু পয়সা।
বাজারে ঢুকলে পণ্যের সম্ভার সাজিয়ে রাখা দোকানিদের দিকেই সবার চোখ যায়। ভিড়ের মাঝে এক কোণে সামান্য কিছু পণ্য নিয়ে বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকানোর সময় কই? এই প্রতিবেদন পড়ার পর বাজারে গিয়ে একটু নজর করলেই দেখবেন, এমন অসহায় বৃদ্ধ মানুষগুলো বসে আছে ক্রেতার অপেক্ষায়। অন্তত একদিন কেউ হয়ে যেতে পারেন এই বৃদ্ধদের সেই কাঙ্খিত ক্রেতা। প্রয়োজন না থাকলেও স্রেফ অপ্রয়োজনে দামাদামি ছাড়াই তাদের থেকে কিনে নিতে পারেন পছন্দসই কোনো পণ্য।
সুত্র: কালের কন্ঠ
আপনার মতামত জানান