প্রতিবেশীদের দাবী জি কে শামীম নির্দোষ
ডেইলি সোনারগাঁ >>
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিকেতনে তার ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্সে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি নগদ অর্থ, ১৬৫ কোটি টাকার বেশি এফডিআর এবং বিপুল মার্কিন ও সিঙ্গাপুরি ডলারসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম।
শামীমকে আটকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শামীমের বৈধ অস্ত্র অবৈধ কাজে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন, আদালতে শামীম নির্দোষ প্রমাণিত হলে ছাড়া পাবে আর দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের (চরভুলুয়া গ্রামের) দক্ষিণপাড়ার মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জি কে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে সে মেজ।
স্থানীয় ও তার রাজনীতির কর্মীরা জানান, প্রাইমারি ও হাই স্কুল পাস করার পর ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন তারা । মাদ্রাসা বোর্ড থেকে ফাজিল পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইরেজীতে অনার্স, মাষ্টার্স করেন। বিবাহিত জীবনে তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী শামীম সুলতানা ঢাকার একটি সরকারি কলেজের প্রভাষক। দুই মেয়ে ও ছেলে ঢাকায় লেখাপড়া করে বলে তার এক আত্মীয় নিশ্চিত করেছেন। গ্রামে খুব একটা যাতায়াত নেই। শামীম যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক।
এলাকাবাসী আরো জানান, শামীমের পরিবার বংশগত ভাবেই উচ্চ শিক্ষিত। এলাকায় তাদের সম্রান্ত মুসলিম পরিবার হিসেবে জানে।তার পিতা একজন হাফেজ। এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ গরীব অসহায়দের সাহায্য সহযোগিতা করত। পূর্বপুরুষের আমল থেকেই তার সম্পদশালী এবং অনেক জমির মালিক।
পারিবারিক সুত্রে সে বিএনপির রাজনীতির সাথে সাথে জড়িত। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর একই গ্রামে। বিএনপির যুব সংগঠন যুবদল নেতা জি কে শামীম লেখাপড়া শেষে বড় ভাই নাসিমের হাত ধরে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে শামীম ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ সম্পাদক এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের খুবই ঘনিষ্ঠ। মীর্জা আব্বাসের সুনজরের কারনে তিনি গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ের ঠিকাদারি নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন।
মীর্জা আব্বাস ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে মীর্জা আব্বাস গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই গণপূর্ত ভবনের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীনই সে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে।
বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হলে গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের আধিপত্য ধরে রাখতে যোগ দেন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগে। একটি সুত্র জানায়, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারা রহস্যময় কারনে ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদে তাকে নিরবাচিত করেন। টাকার দাপটে তিনি হয়ে ওঠেন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা, তার নিয়ন্ত্রনে চলে গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সকল প্রকার সরকারি টেন্ডার। সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারন সম্পাদক শহীদ বাদলকে ম্যানেজ করে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদটিও নিজের করে নেন।
ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরাই কাল হয় শামীমের। জানা যায়, প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার সবার হাতে শটগান গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাকই নিয়ন্ত্রণ করতো গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের তার নির্বাচিত ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ কাজ করতে পারেন না। এমনি কি তাকে না জানিয়ে কেউ দরপত্র ক্রয় করার সাহস পেত না।
জি কে শামীমের অফিসসুত্রে জানা যায়, জি কে বিল্ডার্স বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, মিরপুর ৬, মহাখালী ডাইজেস্টিভ, অ্যাজমা সেন্টার, ক্যানসার হাসপাতাল, সেবা মহাবিদ্যালয়, বেইলি রোডের পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স, সচিবালয় কেবিনেট ভবন, এনবিআর, নিউরো সায়েন্স, বিজ্ঞান যাদুঘর, পিএসসি, এনজিও ফাউন্ডেশন ও র্যাব হেডকোয়ার্টার্স সহ অন্তত ২২টি সরকারি টেন্ডার কয়েক হাজার কোটি টাকার নির্মাণকাজের দায়িত্ব পেয়েছেন।
চর ভুলুয়া গ্রামের পুরুষ-মহিলা সহ সবার দাবী, শামীম কোন ধরনের অপরাধ ও অন্যায় কাজে জড়িত থাকতে পারেন না।তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে সসম্মানে ফিরে আসবেন বলে তাদের বিশ্বাস।
আপনার মতামত জানান