প্রতিপক্ষকে ফাসাতে শিশু তুহিন নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তার পরিবার: পুলিশ
সোমবার (১৪ অক্টোবর) ভোরে দিরাইয়ের রাজনগর ইউনিয়নের খেজাউড়া গ্রামে গাছের সঙ্গে ঝোলানো অবস্থায় তুহিনের মরদেহ দেখতে পায় পরিবারের লোকজন। তখন তার পুরো শরীর রক্তাক্ত, কান ও লিঙ্গ কাটা ছিল। এছাড়া পেটে দু’টি ছুরি বিদ্ধ ছিল। সে ছুরির বাটে লেখা ছিলো একই গ্রামের ছালাতুল ও সোলেমানের নাম।
কলম দিয়ে লেখা ছালাতুল ও সোলেমানের নাম লেখা দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়।পাঁচ বছরের একটি অবুঝ শিশুকে এমন নৃশংসভাবে খুন করে সেই খুনের আলামত হিসেবে খুনিরা নিজেদের নাম লেখা ছুরি শিশুর পেটে বিদ্ধ করে রেখে যাবে? অপরাধ বিশ্লেষক সহ গ্রামের কেউ মেনে নিতে পারেনি বিষয়টা।
ছুড়ির বাটে নাম দেখে বিষয়টি তদন্তের জন্য গ্রামবাসীর কাছে ছালাতুল ও সোলেমানের পরিচয় জানতে চাইলে গ্রামবাসী জানান তারা একই গ্রামের। তাদের সাথে তুহিনের বাবা বাছিরের জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে।
তুহিনের বাবা জানান, তারা দু’জন একসাথে ঘুমিয়ে ছিলো। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখে তুহিন ঘরে নেই। ঘরের দরজা খোলা। পরে পরিবারের সবাই জানালে তারা অনেক খোজাখুজির পর রক্তের দাগ দেখে কেজাউড়া গ্রামের একটি কদমগাছে তুহিনের জুলন্ত লাশ দেখতে পায়। দুটি কান ও লিঙ্গ কাটা অবস্থায় দড়ি দিয়ে কদম গাছে ঝুলানো। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
ঘটনার পর পরিবারের লোকজন কিছুই জানে না বলে দাবি করে। পরে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সবকিছুর আলামত সংগ্রহ করে। দুপুরে তুহিনের পরিবারের সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ দিরাই থানায় নিয়ে আসে। তারা হলেন- তুহিনের চাচা আব্দুল মছব্বির, জমশেদ মিয়া, নাসির মিয়া, জাকিরুল, তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, তুহিনের মা খাইরুননেছা ও চাচাতো বোন তানিয়া।
শিশু তুহিন মিয়া (৫) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার পরিবারের লোকজনই জড়িত বলে ধারণা করছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ক্ষেত্রে তুহিনের স্বজনদের যোগসাজশ রয়েছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দিরাই থানার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এমনই ইঙ্গিত দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, মিজানুর রহমান বলেন, তাদের দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের মধ্যে কয়েকজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেন। সন্দেহ করা হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটনো হয়েছে। আরও অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে সব কিছু বের করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।
সূত্রে জানা যায়, তুহিনের পেটে যে দু’টি ছুরি বিদ্ধ ছিল, তার বাটে কলম দিয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা ছালাতুল ও সোলেমানের নাম লেখা দেখা যায়। এ দু’জন তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরের প্রতিপক্ষ সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের লোক বলে পরিচিত।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরির মধ্যে কীভাবে নাম লেখা হয়েছে বা কারা এটি সাজিয়েছে তা-ও তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত শেষ হলে সাংবাদিকদের সবকিছু বলা হবে।
আপনার মতামত জানান