প্রথম দেখায়ই ‘ভালোবাসি’ বলাটা কি ঠিক?

প্রকাশিত

প্রথম সুযোগেই বলে দেব স্ট্রেটকাট, ভালোবাসি
আবার যখনই দেখা হবে,
আমি প্রথম সুযোগেই
বলে দেব স্ট্রেটকাট,
ভালোবাসি।
–নির্মলেন্দু গুণ

সত্যিই কি তাই? স্ট্রেটকাট বলে দেয়া যায় ভালোবাসি? বুকের মধ্যে দামামা বাজে। যতবার তাকে দেখি। মনে হয়, এই মেয়েটির জন্মই হয়েছে আমার জন্যে। এর জন্য সব করতে পারি। মেয়েটি মৃদু হাসি শরীলে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। কাছে যাই। এ কথা সে কথা। কত কথা। গল্প, আড্ডা সব হয়। হয় না বলা মনের মধ্যে লুকায়িত সেই কথাটি। কথাগুলো কলেজ পড়ুয়া সাকিবের। অসুবিধা কী, বলেই ফেলুন না। ভয় হয় যদি মেয়েটি না বলে দেয়। তার চেয়ে এই ভালো। তার কথা না হয় নাই জানলাম, তাকে ভালোবাসি এটাই আত্মতৃপ্তি বললো সাকিব।

ভালোবাসা কি একদিনে হয়? সময় তো লাগেই। প্রথম দেখায় ভালো লাগা হতে পারে। ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা হতে হলে মিশতে হবে। এক অপরকে বুঝতে হবে। ইমন-ফারহানার কথাই ধরা যাক। কলেজে পরিচয়। তারপর বন্ধুত্ব। চোখে চোখ রাখা। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। আড্ডায় পাশাপাশি বসা। গিফট আদান-প্রদান। টুকটাক চিরকুট দেয়া-নেয়া। ভালোলাগা খারাপলাগা শেয়ার করা। এভাবেই সবার মাঝে থেকেও ওরা দুজন একটু আলাদা। একটু বেশিই বন্ধু। দু’জনে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ফারহানার এক জন্মদিনে ইমন একটি খাম ধরিয়ে দিল। আমি তোমাকে ভালোবাসি- এই তিনটি শব্দ খামের মধ্যে। এরপর অবশ্য কয়েক দিন যোগাযোগই রাখেনি ফারহানা। ইমনের তখন যে কী অবস্থা। শুধুই তার কান্না পাচ্ছিল। তিন দিন পর ফারহানা ইমনের সাথে দেখা করল। আদর সোহাগে কান মলে দিয়ে বললো, শয়তান ভালোবাসার কথা বলতে এত সময় নিলি কেন? আমার বুঝি কষ্ট হয় না!

বড়বোনের বান্ধবী। অপরূপ সুন্দরী। দিঘল কালো চুল। লম্বা চিপচিপে। বোনের সঙ্গে যেদিন প্রথম দেখি, চোখের পলক ফেলতে পারছিলাম না। মেয়েটি আমার চেয়ে বয়সে একটু বড়। তারপরও তাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনি। রাত দিন সব সময়ই যেন সে মনের মধ্যে সদর্পে ঘুরে বেড়ায়। সে যেন মনের দখলদার। আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও হয়। তারপরও কোথায় যেন অদৃশ্য এক দেয়াল। এভাবেই নিজের ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করলো সামিন। সামিন শেষ অবধি ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি। একদিন মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল। চোখের জ্বলে সিক্ত হলো সামিন। হারানোর ভয়েই সে বলতে পারেনি স্ট্রেটকাট- ভালোবাসি।

ভালোবাসতে মন লাগে। সাহসও লাগে। সাহস দেখিয়ে বলতে হয়, তোমাকে ভালোবাসি। জোড় খাটিয়ে বলতে হয়, আমাকে ভালোবাসতেই হবে। এ জোড় ভালোবাসার জোড়। গায়ের জোড় নয়। কথাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইভার। তাহলে কি আপনি জোড় খাটিয়েছেন? প্রশ্নটা শুনে মোটেও বিব্রত নয় ইভা। বলল সে- আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছি ভালোবাসি। তার চোখের ভাষাই বুঝে ফেলেছি ও আমাকে ভালোবাসে। হয়তো বলতে সংকোচ করছে। ভালোবাসি কথাটা বলার পরে গভীর প্রেম হলো। তারপর বিয়ে।

তখন ক্লাস টেনে পড়ি। একটি মেয়েকে ভীষণ ভালো লেগে গেল। তাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করে। বন্ধুদের বললাম। ওরা বুদ্ধি দিল। ছোট্ট একটা চিরকুটে লিখলাম- আমি একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি (একবার বলেছি তোমাকে- আহসান হাবিব)। বইয়ের মধ্যে চিরকুটটা দিয়ে দিলাম। ও টেরই পেল না। পরে ও অনেক দিন আমার সাথে কথা বলেনি। ওর বান্ধবীদের কাছ থেকে জেনেছি, চিরকুটটা ওর প্রাইভেট স্যারের হাতে পড়ে। সে ওর মাকে এটা দিয়ে দেয়। তারপর কী হতে পারে- বুঝতেই পারছেন বলল রাকিব।

প্রায় চল্লিশ বছরের দাম্পত্য জীবন। সুখী পরিবার। এক ছেলে এক মেয়ে। বিয়েটা পরিবারের পছন্দেই হয়। পাশাপাশি বাসা ছিল। দুজনের দেখা হতো। টুকটাক কথাও হতো; এটুকুই। তখন তো আর মোবাইল, পার্ক ছিল না। ছিল না ছেলেমেয়েতে অবাধ চলাফেরা। তারপরও দুটি মন ভালোবাসার সাগরের হাবুডুবু খেল। বাসর রাতেই বউকে বলা- আমি তোমায় ভালোবাসি। বউও বলল- আমিও তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার এ গল্প জামান মুনিয়ার। তাদের কথা, সত্যিই যদি ভালোবাসা হয় সেটা বুঝা যায়। আচার আচরণ, চলাফেরা, অনুভূতির বিনিময়, চিঠি সব কিছুতেই। তবে এটাও সত্যি, বিয়ের পরে ভালোবাসা বলা। আর বিয়ের আগে ভালোবাসি বলে প্রেমের সাগরে মন ভাসানো দুটি ভিন্ন জিনিস।

ভালোবাসি বলতে ভয় আছে। না পাওয়ার শঙ্কা আছে। আবার না বলায় হারানোর ব্যাপারটাও যেন লেগে আছে। সুমনের কথাই ধরা যাক। কেয়াকে সে পাগলের মতো ভালোবাসে। তার জন্য পারে না এমন কিছুই নেই। ভালো বন্ধুত্বও ওদের মধ্যে। এভাবেই চলছিল বেশ। এক ভালোবাসা দিবসে কেয়া বলল- সুমন তুমি কি কিছু বলবে আমাকে। সুমনের গলা ধরে আসে। কথা বের হয় না। শরীর ঘেমে একাকার। না, কিছু না বলে সুমন সেদিন সরে পড়ল। তারপর থেকে যেন কেয়া ধীরে ধীরে দূরে সরে গেল। অন্য এক ছেলের সাথে তাকে ঘুরতে দেখা যায়। সুমনের ফোন ধরে না। ওকে এড়িয়ে চলে। এভাবেই সুমনের জীবন থেকে কেয়া হারিয়ে যায়। বহু বছর পর। সুমনের সাথে কেয়ার দেখা। তখন কেয়া দুই সন্তানের মা। অনেক গল্প হলো সেদিন। একপর্যায়ে কেয়া বলল, সুমন সত্যি করে বলতো তুমি কি আমায় ভালোবাসতে? সুমন সেদিন হ্যাঁ বলল। হ্যাঁ বলার শক্তি সেদিন তার হলো। তবে বড্ড বেশি দেরিতে।

মেয়ে না ছেলে। কে আগে বলে ভালোবাসি। কথা আছে না, মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না। ভালো ওরা ঠিকই বাসে; কিন্তু বলে না। ছেলেরাই ভালোবাসি কথাটা আগে বলে। বিচ্ছিন্নভাবে দশ জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার ওপর জরিপে এ তথ্যই উঠে এসেছে।

ভালোবাসা হোক বা না হোক। ভালোবাসি কথা বলে ফেলাই ভালো। তবে একটু বেশি সময় মেলামেশা। খানিকটা বোঝাপাড়ার পরে হলেই উত্তম। এমনটাই এখনকার তারুণ্য মনে করে।

সূত্রঃ যুগান্তর।

আপনার মতামত জানান