প্রকাশ্যে দিনরাত মেঘনার বালু লুট, নিরব প্রশাসন

ডেইলি সোনারগাঁ >>
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় ড্রেজারের সাহায্যে দিনরাত ২৪ঘন্টা মেঘনার বালু লুট করছে চিহ্নিত বালু সন্ত্রাসী চক্র। প্রকাশ্যে নদীর বালু লুটপাট করলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় ইজারা ছাড়াই ৩০ থেকে ৪০টি ড্রেজার দিয়ে নিয়মিত দিনরাত মেঘনার বালু বাল্কহেডে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছে একটি সন্ত্রাসী চক্র। নদীর তীরবর্তী হারিয়া, নুনেরটেক, সোনাময়ী ও মামরকপুর গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত। এর আগে বালু সন্ত্রাসীদের বাধা দেওয়ায় নুরু মিয়া, আমজাদ হোসেন, আলমগীর মিয়া, নুর হোসেনসহ ১০ গ্রামবাসীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে। বালু সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে সমঝোতা করে প্রকাশ্যে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (২অক্টোবর) রাতে আনন্দবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাতি জ্বালিয়ে ৩০ থেকে ৪০টি বড় ড্রেজার আনন্দ বাজারের খুব কাছ থেকে নদী থেকে বালু তুলছে। স্থানীয় লোকজন যাতে এতে বাধা দিতে না পারে, সে জন্য নদীতে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পাহারা দিচ্ছেন। গ্রামবাসী জানান, সরকারের কাছ থেকে কোনো রকম অনুমতি বা ইজারা না নিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।
আনন্দবাজার এলাকার বাসিন্দারা জানান, যারা বালু সন্ত্রাস করছে তারা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের অত্যন্ত কাছের লোক। তাদের সবাই চিনে, আমরা নাম বলে বিপদে পরতে চাই না। চক্রটি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের মদদে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে বালু লুটপাট করছে।
নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু কেটে নেওয়ার কারণে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার, মামরকপুর, হারিয়া, সোনাময়ী, সাতভাইয়াপাড়াসহ সাত গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে। যে কোনো সময় কয়েক শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ বাজার হাট, তীরবর্তী ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
নাম প্রকাশ না শর্তে স্থানীয়রা বলেন, ‘আমাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার জন্য ভোট দিয়ে যে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেছি, তাঁরাই অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আমাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন কর দিচ্ছেন। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা একাধিকবার ইউএনওকে স্মারকলিপি দিয়েছি। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছি। আন্দোলন করার পর প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’ প্রশাসনের সহযোগিতায় বালু লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া বলেন, ‘নদীর তীর ঘেঁষে ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলনের কারণেই ওই এলাকায় নদীভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। যেহেতু নদীর বালুমহালগুলোর ইজারা জেলা প্রশাসন দিয়ে থাকে, তাই জেলা প্রশাসনেরই দায়িত্ব এসব অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ করা।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ‘অবৈধভাবে যদি কেউ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে, তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত জানান