পুলিশ আসার পর চোরকে ছেড়ে দিল

প্রকাশিত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভা সংলগ্ন সোহরাব উদ্দিনের চার তলা ভবনে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার সময় চুরি করতে এসে হাতে নাতে ধরা পড়ে ইউসুফ নামের এক যুবক। প্রতিবেশী ও পৌরসভা মার্কেটের লোকজন তাকে মারধর করলে স্থানীয় সাংবাদিক সোনারগাঁ থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আইনী জটিলতা দেখিয়ে স্থানীয়দের ব্যবস্থা নিতে বলে। এ সময় স্থানীয়রা চোরকে ছেড়ে দিলে সে বুক ফুলিয়ে সবার চোখের সামনে দিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।

জানা যায়, উপজেলার হামছাদী গ্রামের সোহরাব উদ্দিনের পৌরসভা সংলগ্ন চারতলা ভবনের চারতলায় একটি ফ্ল্যাট নিয়ে স্থানীয় মৃত শুক্কুর আলী মেম্বারের বড় মেয়ে রিনা আক্তার বসবাস করেন। গত বুধবার শটসার্কিটের কারনে রুমে আগুন লাগলে তারা তাদের নোয়াইলের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। আগামী শুক্রবার মিলাদের পর ভাড়া ফ্লাটে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন। এ সুযোগে আড়াইহাজার উপজেলার তেতুইতলা গ্রামের আঃ কুদ্দুছের ছেলে ইউসুফ চারতলায় উঠে তালা ভেঙ্গে কক্ষে প্রবেশ করে। এ সময় সে চারটি কামরার প্রতিটি আলমিরা, ওয়ার্ডড্রপ, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ব্যাগে ভরতে থাকে। এমন সময় রিনা ও তার ৬ বছর বয়সের ছেলে এক্সরে কাগজ আনতে গেলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখতে পায়। দরজায় টোকা দিতে থাকলে লুকিয়ে থাকা চোর ইউসুফ তাদেরকে সজোড়ে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যেতে চাইলে চোর চোর বলে চিৎকার দিলে আশপাশের রুমের ভাড়াটিয়া ও বাজারের ব্যবসায়ীরা তাকে আটক করে।

এ সময় বাজারের শতশত মানুষ চোরকে গণপিটুনী দিতে থাকলে স্থানীয় সাংবাদিকরা চোরকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলে অন্যথায় মারা গেলে আইনী ঝামেলা হবে বলে জানায়। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশকে খবর দেয়ার ৪৫ মিনিট পর সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক ইয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে পৌছেন। চোরকে আটক করার জন্য তিনি রিনা আক্তার কিংবা তার স্বামীকে বাদী হয়ে মামলা দায়েরের কথা জানালে তারা মামলা করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে চোরকে তাদের জিম্বায় রেখে পুলিশ চলে আসলে তারা চোরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

এ ব্যাপারে রিনা আক্তার জানান, আমি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চাকুরী করি। মামলা, পুলিশ, কোটকাছারীতে ঘুরে অযথা হয়রানির শিকার হতে হবে তাই মামলায় জড়াতে চাই না। আমরা ভেবেছিলাম পুলিশ চোরকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করবে।

স্থানীয়রা জানান, সোনারগাঁয়ে কয়েক দিন পরপর দুধর্ষ চুরি হলেও চোর ধরা পড়ে না। আর চোরকে হাতে নাতে আটক করলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় চুরি বেড়ে যাবে বলে তাদের ধারনা। তারা জানান, কেউ যদি মামলা না দেয় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। আর সাধারন মানুষও মামলা দিয়ে পুলিশী ঝামেলায় ঝড়াবে না। আর এ সুযোগে চোরেরা নিশ্চিন্তে চুরি করবে। তবে প্রশাসনের উচিত, এসব চোরদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সোনারগাঁয়ে প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে। গত ১৩ জুন ভট্টপুরে, ৩ জুন দৈলেরবাগের মিঠু আহমেদের বাড়িতে, ১২ জুন মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় এবং গতকাল ১৫ জুন রিনা আক্তারের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। চুরি ঠেকাতে সকলে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ আশা করছেন।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াউর রহমান জানান, কেউ মামলার বাদী হতে না চাওয়ায় ওসি স্যারের সাথে কথা বলে চোরকে তাদের (যাদের ঘরে চুরি হয়েছে) জিম্মায় রেখে আসি।

আপনার মতামত জানান