পাঁচ শহীদ সাংবাদিকের পরিবারকে কোটি টাকার চেক দিল বসুন্ধরাগ্রুপ

প্রকাশিত




নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিক পরিবারের সদস্যের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এক কোটি টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ‘জুলাই শহীদ সম্মাননা ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পক্ষ থেকে চেক হস্তান্তর করেন মিডিয়া গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) কাদের গনি চৌধুরী।

শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবারকে কোটি টাকার চেক দিল বসুন্ধরা গ্রুপএ সময় তিনি শহীদ পাঁচ সাংবাদিক পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, যাঁরা দেশের জন্য ভালো কাজ করেন, মানুষের জন্য কাজ করেন তাঁদের নীরবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।


আমরা এ কাজ অব্যাহত রাখতে চাই। আজ এই পাঁচ পরিবারকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা আপনাদের পাশে আছি এবং থাকব।’
কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক লুত্ফর রহমান হিমেল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী, নিউজ টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী সম্পাদক ফরহাদুল ইসলাম ফরিদ, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন হোসেন পাভেল, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, নিউজ টোয়েন্টিফোরের হেড অব নিউজ শরিফুল ইসলাম খান ও ডেপুটি চিফ নিউজ এডিটর আশিকুর রহমান শ্রাবণ প্রমুখ।

শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবারকে কোটি টাকার চেক দিল বসুন্ধরা গ্রুপঅনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে ২০ লাখ টাকা করে মোট এক কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।


সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র চেক গ্রহণ করেন তাঁর মা সামসিয়ানা জাহান, হাসান মেহেদীর চেক গ্রহণ করেন তাঁর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি, শাকিল হোসেনের চেক গ্রহণ করেন তাঁর বাবা বেলায়েত হোসেন, আবু তাহের তুরাবের চেক গ্রহণ করেন তাঁর বড় ভাই আবুল কালাম মোহাম্মদ শরিফ ও সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিকের চেক গ্রহণ করেন তাঁর ছেলে সুজন ভৌমিক।
অনুষ্ঠানে শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা সামসিয়ানা জাহান বলেন, ‘এখানে ছেলের ছবি দেখে একদিকে যেমন গর্ভে বুক ভরে যায়; অন্যদিকে কষ্টেও বুক ফেটে যায়। এই ভেবে যে সে এখন আমার সঙ্গে নেই। আমাদের সন্তানরা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ ও এই গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা চাইনি, কিন্তু আপনারা দিয়েছেন এ জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার ছেলের একটি ছোট মেয়ে আছে। এই অর্থ যেন আমি আমার নাতনির জন্য সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারি। আমি আশা করব আপনার সব সময় আমাদের খোঁজখবর নেবেন।

হাসান মেহেদীর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি বলেন, ‘আমার স্বামী আহত হওয়ার আধাঘণ্টা আগেও আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। ফোনে এত আওয়াজ শুনে আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি দূরে সরে যাও। তখন সে আমাকে বলেছিল, এটা আমার দায়িত্ব, দূরে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

শাকিল হোসেনের বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে শহীদ পরিবারের দুঃখ-বেদনায় পাশে দাঁড়িয়েছে, এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। আমি মনে করি, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান একজন দানবীর এবং তিনি এই দানবীর হিসেবে পরিচিত পাবেন। তিনি যেন সব শহীদ পরিবারের পাশে থাকতে পারেন আমি সেই কামনা করছি।’

সভাপতির বক্তব্যে কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘অনুদানের থেকে বড় বিষয় হচ্ছে এসব পরিবারের জীবিকার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এরই মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের ভাইকে বসুন্ধরা গ্রুপে চাকরির ব্যবস্থা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ এর আগেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির এতিম ছেলের ভরণ-পোষণের জন্য সহায়তা দিয়েছেন। পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম নিজে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে পাঁচ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। সেখান থেকেও এই শহীদ পরিবার সহায়তা পাবে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ‘কোনো মৃত্যুই নিরর্থক নয়। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের কর্তব্য শহীদ সাংবাদিকদের জীবনদান স্বার্থক করে তোলা। আশা করি এ কর্তব্য থেকে আমরা বিচ্যুত হব না।’

বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক লুত্ফর রহমান হিমেল বলেন, ‘জীবনের মূল্য কখনো অর্থ দিয়ে নিরূপণ করা যায় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা অনেককে সমালোচনা করতে দেখি, কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়ায় না। বসুন্ধরা গ্রুপ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এই গ্রুপ বলে এবং কাজ করে দেখায়।’

কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ অতীতেও সব ধরনের মানবিক কাজে এগিয়ে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এ আয়োজন। এ জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

ইস্ট ওয়েস্ট গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন হোসেন পাভেল বলেন, ‘শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শহীদ ও আহতদের পাশে দাঁড়াব। শহীদ পরিবারের সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’

উল্লেখ্য এর আগে গত ৯ জানুয়ারি কালের কণ্ঠের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিক পরিবারকে সম্মাননা স্মারক এবং প্রত্যেককে দুই লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শহীদ পাঁচ পরিবারকে এক কোটি টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

শহীদ পাঁচ সাংবাদিক হলেন—অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী, তিনি গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিতে শহীদ হন। দ্য রিপোর্ট ডটলাইভের সাবেক ভিডিও জার্নালিস্ট তাহির জামান প্রিয়, তিনি গত ১৯ জুলাই ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডে সংঘর্ষ চলাকালে শহীদ হন। দৈনিক ভোরের আওয়াজের গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি শাকিল হোসেন, তিনি উত্তরার আজমপুরে ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলতে গিয়ে শহীদ হন। দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরোপ্রধান আবু তাহের তুরাব, তিনি গত ১৯ জুলাই সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। দৈনিক খবরপত্রের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি প্রদীপ ভৌমিক, গত ৪ আগস্ট দায়িত্ব পালনকালে শহীদ হন।

আপনার মতামত জানান