নুরুদ্দিন পাগলার কষ্টের টাকা জলে গেল!
অনুগল্প
খুব সকালে পুকুরপাড়ে নুরুদ্দিন পাগলাকে দেখে অবাকই হলাম। এত সকালে সে পুকুর পাড়ে কি করে। কোন খারাপ মতলব আছে কিনা দেখতেই কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি খুব মসৃন ছাই দিয়ে দাঁত মেজে কুলি করছে, আর পুকুরে পানি ছিটা দিয়ে ঢেউ তুলে বলছে যা সব পানিতে ভেসে যা।
কিরে পাগলা পানিতে কি ভাসিয়ে দিচ্ছিস?
আওয়াজ শুনে পিছনে তাকিয়েই বলল, অনেক কষ্টের হাড়ে তিনশ টাকা ভাসায়ে দিলাম।
টাকা কোথায়? এতো দাঁত মেঝে কুলি করে ছাই ফেললি।
ছাই না টাকা এটার আপনি কি বুঝবেন? যার যায় সে বুঝে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে জবাব দিল।
বুঝিয়ে দিলেই তো বুঝি নরম সুরে তাকে বললাম।
তয় হুনেন। গত কয়দিন আগে হাড়ে তিনশ টেকা দিয়া একটা পাঞ্জাবী কিনছি।
তো কি হয়েছে পাঞ্জাবীর?
আগে হুনেন পরে কতা কন। দুই বছর পিনতে না পিনতেই পাঞ্জাবীর নিচে দিয়া ছিড়া গেছে।
ছেড়া পাঞ্জাবি কি ফেলে দিয়েছিস?
ফালামু কেন? নিচে দিয়ে কাইট্টা ফতুয়া বানাইয়া আরো দুই বছর পিন্দার পর ফতুয়ার আতা ছিড়ে গেছে।
ফতুয়া কি করলি?
কি আর করমু? ফতুয়ার আতা কাইট্ট সেন্টু গেঞ্জি বানাইয়া আরো দেড় বছর পিন্দার পর সেন্টু গেঞ্জির নিচে দিয় ছিড়া গেছে।
এবার নিশ্চয় গেঞ্জি পানিতে ভাসাইয়া দিছস?
দুর মিয়া এত টেহার জিনিস না পিন্দাই ফালাইয়া দিমু আমি কি এত পাগল?
তো করলি?
সেন্টু গেঞ্জির দুই আতা দিয়া বাইরের দিক থাইকা পা ঢুকাইয়া জাইঙ্গা বানাইয়া এক বছর পিনছি।
তারপর?
এরপর জাইঙ্গা ছিড়া গেছে।
এখন তো ফেলতেই হবে?
রাহেন মিয়া এতো পাগল অইনাই টেকা দিয়া কিন্না ফালাই দিমু। ছিড়া জিইঙ্গা দিয়া টেহা রাহনের খুতি বানাইয়া আরো দুই বছর ব্যবহার করছি। রাইতে দেহি খুতিডাও ছিড়া গেছে। সারারাত সাড়ে তিনশ টেহার কষ্টে ঘুমাইতে পারি নাই।সকাল বেলা পুস্কনিতে খুতিডা ফালাইতে আনছি। ফালাইতে পারি নাই কষ্টে বুকটা ফাইট্টা যাইতেছে। এরপর ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরাইয়া খুতি পুইড়া দাঁত মাঝলাম। অনেক কষ্ট কইরাও ছাইটুক গিলতে পারি নাই। বাইধ্য অইয়া কুলি করলাম। এহন দেহি আমার কুলির লগে হারে তিনশ টেহা ভাইসা যাইতেছে।
আফনেই কন, টেহার জিনিস যদি ঠিকমতন ব্যবহার করতে না পারি তয় কষ্ট লাগে না। আইচ্ছা কন পাঞ্জাবিটা কয়দিন ব্যবহার করলাম?
আমাকে হাসতে দেখে নুরুদ্দিন পাগলা ধমক দিয়ে বলল, হাইসেন না। হাইসেন না।আমার পাঞ্জাবিডার মতন মানুষের জীবন। বড় থাইক্কা শুরু অইয়া ছোড অইতে অইতে একদিন কুলির পানির মোতন আলগছতে শেষ অইয়া যায়।
আপনার মতামত জানান