নাতিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার চিত্র

প্রকাশিত

রাসুল (সা.) নাতিদের ভালোবাসতেন। তাদের দ্বিন শিক্ষা দিতেন। আমল শেখাতেন। মসজিদে নিয়ে যেতেন। ইসলামের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যশীল হওয়ার পাঠ দিতেন। জান্নাতি জীবনের সন্ধান দিতেন। উত্তম আচার-ব্যবহার শেখাতেন। নাতিদের সঙ্গে তাঁর আচরণ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। নাতিদের গড়ে তুলতে পারি মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শে।

নাতিদের কানে আজান দিতেন : রাসুল (সা.)-এর কোনো নাতি জন্ম নিলে আনন্দ প্রকাশ করতেন। আল্লাহর বড়ত্বের কথা কানে পৌঁছাতেন। ডান কানে আজান দিতেন। আবু রাফি (রা.) বলেন, ‘ফাতিমার যখন সন্তান হলো আমি দেখলাম, রাসুল (সা.) নামাজের আজানের মতো করে হাসানের কানে আজান দিচ্ছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১০৫)

নাতিদের আকিকা দিতেন : ইসলামে আকিকা সুন্নত। সন্তান জন্মের সাত দিনের মাথায় আকিকা করতে হয়। ছেলেশিশুর জন্য দুটি, মেয়েশিশুর জন্য একটি। রাসুল (সা.) স্বীয় নাতিদের জন্য আকিকা দিয়েছিলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) হাসান ও হুসাইনের আকিকা জোড়া জোড়া ভেড়া জবাই করে দিয়েছিলেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪২১৯)

চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করা : সদকা বিপদ-আপদ দূর করে। জীবনে শান্তি বইয়ে আনে। আমলের ঝুলিতে সওয়াব বৃদ্ধি করে। রাসুল (সা.) নাতিদের কল্যাণ কামনা ও বিপদ মুক্তির আশায় সদকা করতেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) হাসান-হুসাইনের জন্মের সপ্তম দিনে তাদের মাথা মুণ্ডন করার আদেশ দিতেন। এরপর মুণ্ডানো চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করতেন।’ (মুসনাদ বাজ্জার, হাদিস : ৬১৯৯)

তাদের কোলে নিতেন : রাসুল (সা.) নাতিদের সঙ্গে খেলতেন। তাদের কোলে নিতেন। আদর-যত্ন করতেন। তারা প্রস্রাব করলেও রাগ করতেন না। লুবাবা বিনতে হারিস (রা.) বলেন, ‘একবার শিশু হুসাইন (রা.) রাসুল (সা.)-এর কোলে প্রস্রাব করে দিল। তখন আমি বললাম, অন্য একটি কাপড় পরে নিন। আপনার এ লুঙ্গিটি আমাকে দিন, আমি ধুয়ে দিচ্ছি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৫)

নাতিদের নিয়ে মসজিদে গমন : রাসুল (সা.) নাতিদের আমল শিক্ষা দিতেন। মসজিদে নিয়ে যেতেন। মসজিদমুখী করে গড়ে তুলতেন। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রকল্পে তাঁদের পেছনে শ্রম দিতেন। আবু বাকরা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুল (সা.)-কে আমি মিম্বরের ওপর বসা দেখতে পাই। পাশে হাসান বিন আলী। সে একবার মানুষের দিকে তাকায় আরেকবার রাসুল (সা.)-এর দিকে তাকায়। রাসুল (সা.) তখন বলছিলেন, আমার এ নাতি একজন মহান নেতা। মহান আল্লাহ তার মাধ্যমে মুসলিমদের দুটি বড় দলের মধ্যে মীমাংসা করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭১৪)

তাদের আদর করতেন : রাসুল (সা.) নাতিদের বড্ড আদর করতেন। আবু কাতাদাহ থেকে বর্ণিত, ‘একদিন নবী (সা.) আমাদের সামনে এলেন। উমামা বিনতে আবুল আস তাঁর কাঁধের ওপর ছিলেন। এ অবস্থায় নবী (সা.) নামাজে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যখন তিনি রুকুতে যেতেন, তাকে নামিয়ে রাখতেন। আবার যখন উঠে দাঁড়াতেন, তখন তাকেও উঠিয়ে নিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৬)

চুমো খেতেন : মুহাম্মদ (সা.) সন্তানকে চুমো দেওয়ার জন্য সন্তানের পিতাকে উপদেশ দিতেন। উপদেশ দিতেন নাতিকে চুমো দেওয়ার। তিনি নিজে নাতিদের চুমো খেতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) একবার হাসান ইবনে আলিকে চুম্বন করেন। সে সময় তাঁর কাছে আকরা ইবনে হাবিস তামিমি বসা ছিলেন। আকরা ইবনে হাবিস বলেন, আমার ১০ পুত্র আছে, আমি তাদের কাউকেই কোনো দিন চুমো দিইনি। রাসুল (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বলেন, যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৭)

রহমতের দোয়া করতেন : রাসুল (সা.) নাতিদের জন্য রহমতের দোয়া করতেন। তাদের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করতেন। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমার হাত ধরে তাঁর এক রানের ওপর আমাকে এবং অন্য রানে হাসানকে বসাতেন। তারপর দুজনকে একত্রে মিলিয়ে নিয়ে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মারহাম হুমা, ফা ইন্নি আরহামুহুমা’ (হে আল্লাহ, আপনি এদের দুজনের ওপর রহম করুন, কেননা আমিও এদের ভালোবাসি)।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০০৩)

নাতিদের নিয়ে বাহনে চড়তেন : রাসুল (সা.) বাহনে চড়ে নাতিদের ঘোরাতেন। তাঁদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটাতেন। সালামা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর সাদা খচ্চরটির ওপর রাসুল (সা.) নিজে এবং তাঁর দুই নাতি হাসান-হুসাইন সামনে-পেছনে বসা ছিলেন। আমি খচ্চরকে টেনে তাঁর ঘরে প্রবেশ করালাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪২৩)

আপনার মতামত জানান