নবীজি (সা.)-এর দোয়া পাওয়া যায় যেসব আমলে
ইবরাহিম (আ.) তাঁর বংশধরদের জন্য এবং মক্কা নগরীর জন্য দোয়া করেছেন। পবিত্র কোরআনে সেসব দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সেই দোয়ার সুফল পরবর্তী প্রজন্ম যুগ-যুগান্তরে উপকৃত হয়েছে এবং আজও হচ্ছে। বিশ্ব নবী (সা.)ও তাঁর উম্মতের জন্য বিভিন্ন দোয়া করেছেন।
এবং তাঁর দোয়া লাভের কিছু আমল বলে দিয়েছেন। সেসব আমল করে কিয়ামত অবধি যে কেউ মহানবী (সা.)-এর দোয়ায় শামিল হতে পারে। নিম্নে এমন কিছু আমল উল্লেখ করা হলো—
আসরের ফরজের আগে চার রাকাত নফল সালাত আদায় করা
রাসুল (সা.)-এর দোয়া লাভের অন্যতম একটি উপায় হলো, আসরের ফরজ সালাতের আগে চার রাকাত নফল সালাত আদায় করা। ইবনু ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই ব্যক্তির ওপর রহমত বর্ষণ করেন, যে আসরের সালাতের আগে চার রাকাত (নফল) সালাত আদায় করে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৭১; তিরমিজি, হাদিস : ৪৩০)
রাসুল (সা.) দুই সালামে তথা দুই দুই রাকাত করে এই সালাত আদায় করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৪২৯)
তবে আসরের আগের এই চার রাকাত সালাত সুন্নতে রাত্বেবা (নিয়মিত সুন্নত) নয়; রবং এই চার রাকাত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব, যা নিয়মিত সম্পাদন করা জরুরি নয়।
জামাতের প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে সালাত আদায় করা
যারা জামাতে প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে সালাত আদায় করে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য তিনবার এবং দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লিদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৯৯৬)
আজান দেওয়া ও ইমামতি করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমামদের জন্য হিদায়াতের দোয়া করেছেন এবং মুয়াজ্জিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছে জামিন্দার এবং মুয়াজ্জিন আমানতদার। হে আল্লাহ, তুমি ইমামদের সৎ পথে পরিচালিত করো এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করো। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৭; তিরমিজি, হাদিস : ২০৭)
তাহাজ্জুদের ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা
কোনো দম্পতি যদি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে এবং পরস্পরকে সেই ইবাদতে উৎসাহিত করে, তাহলে সেই স্বামী-স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রহমতের দোয়া লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করুন, যে রাত জেগে সালাত আদায় করে; অতঃপর সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আর আল্লাহ ওই নারীর ওপরও অনুগ্রহ করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৬)
ঋণের পাওনা আদায়ে ও ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীল হওয়া
সহনশীলতা মানব চরিত্রের একটি মহান গুণ। জীবনের পথ চলায় লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, দেনা-পাওনা আদায়ে যারা সহনশীলতা ও কোমলতা প্রদর্শন করে, রাসুল (সা.) তাদের জন্য রহমত ও জান্নাত লাভের দো‘আ করেছেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়। ’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২২০৩)
অধীনস্থ লোকের ওপর কোমল হওয়া
অধীনস্থ ব্যক্তির ওপর কোমলতা ও নম্রতা প্রদর্শনের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়া লাভ করা যায়। নবী করিম (সা.) তাঁর উম্মতের কোমলতা প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে আমার উম্মতের ওপর কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তুমিও তার প্রতি কোমল ও সদয় হও। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২৮)
সকাল বেলার সময়কে কাজে লাগানো
সকাল বেলায় সম্পাদিত যাবতীয় কাজে বরকত নাজিল হয়। রাসুল (সা.) প্রভাতকালে বরকত নাজিলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের ভোর বেলার মধ্যে তাদের বরকত দান করুন। ’
যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কোথাও কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সকাল বেলায়ই পাঠাতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১২১২)
হাদিস মুখস্থ করা ও প্রচার করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া লাভের সৌভাগ্য হাসিলের উল্লেখযোগ্য উপায় হলো, তাঁর হাদিস মুখস্থ করা এবং তা মানুষের মধ্যে প্রচার করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে মর্যাদামণ্ডিত করেন, যে আমার কথা শুনেছে, তা মুখস্থ করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৮)
মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর প্রিয় নবীর দোয়ায় শামিল করুন।
আপনার মতামত জানান