ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় আ’লীগের সফল বাস্তবায়ন নুনেরটেকে বিদ্যুৎ
বিশেষ প্রতিবেদন (ডেইলি সোনারগাঁ):
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদুৎ সমিতি-১ এর উদ্যোগে সোনারগাঁ উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল নুনেরটেক গ্রামে বিদুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে ২০ ডিসেম্বর দুপুরে। উপজেলার বারদী ইউনিয়নের বিদুৎবঞ্চিত চরাঞ্চল নুনের টেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদুৎ সংযোগ দেওয়ার উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ পল্লী সমিতি-১। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা। নুনেরটেকে বিদ্যুৎ সংযোগ কারো ব্যক্তিগত সফলতা নয়, এটা বর্তমান সরকারের মিশন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে একটি সেমিনারে বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভঙ্গুর বিদ্যুৎ খাতের পুনর্গঠন চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। তখন সরকার বেসরকারি খাতের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করে। এরপর ২০০০ সালে আবার জামাত বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ খাতকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এতে করে দেশ ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে। তখন লোডশেডিং এর জন্য রাস্তায় মিছিল হয়েছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করে। ইতোমধ্যে আমরা গ্রিডের বিদ্যুৎ ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। আশা করছি আগামী মার্চের মধ্যে ১০০ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে নির্বাচিত এমপি আ ন ম বাহাউল হক ১৯৮৯ সালে অবহেলিত দ্বীপ নুনেরটেকে আলো ছড়ানোর পদক্ষেপ নেন। তখন পিডব্লিউ’র বিদ্যুৎ ছিল সোনার হরিণ। যেখানে মফস্বল শহরেও বিদ্যুৎ ছিল না সেখানে নুনেরটেকে বিদ্যুৎ নেয়া ছিল অসম্ভব। বিএনপি থেকে নির্বাচিত এমপি এবং পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুতায়নের চেষ্টা করলেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ স্বল্পতার কারনে শহরে যেখানে লোড শেডিংয়ের যন্ত্রনায় নাকাল সেখানে রেজাউল করিমের সকল চেষ্টা ব্যর্থ্য হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত নির্বাচিত হয়ে নুনেরটেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেন। শুরু হয় নুনেরটেকে বিদ্যুতায়নের রোডম্যাপ প্রক্রিয়া। কিন্তু আওয়ামী সরকার ভঙ্গুর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করায় প্রক্রিয়াটি চলমান থাকে। পরে রাজনৈতিক মেরুকরনের কারনে কায়সার হাসনাত ক্ষমতার বাইরে চলে গেলেও বিদ্যুৎ বিবাগের তত্বাবধানে নুনেরটেকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রক্রিয়া চলমান থাকে। ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি হওয়ার পূর্বেই সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার ঘোষনা দেন। সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে বিদ্যুৎ বিভাগ স্বপ্রনোদিতভাবে প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধমে বিদ্যুতের চাহিদা পাঠাতে বলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
এখানে উল্লেখ থাকে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর বিদ্যুৎ উপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭ টি যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো মাত্র ৩,২৬৮ (মেঃওঃ), বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ( ৪৭%) আর বর্তমানে বিদ্যুৎ উপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪০টি যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১২,৮৯২ (মেঃওঃ), বর্তমানে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ( ৯৯%)। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ সংযোগ একটি অটো প্রক্রিয়া। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ শ্লোগান নিয়ে শতভাগ সফলতার শেষপ্রান্তে বিদ্যুৎ বিভাগ।
উন্নয়ণ বিম্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকার যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ ও শিক্ষা সহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশ্বে অনন্য নজির সৃস্টি করে চলেছেন।এটা বর্তমান সরকারের দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী সফলতা।এটা কোন ব্যক্তি সফলতা নয়, এ সফলতা সরকারের। এখানে কাউকে ছোট কিংবা বড় করে বাহবা নেয়ার সুযোগ নেই।
নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্টানে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. সাইরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের রূপকল্প ২০২১ সফল বাস্তবায়নে নুনেরটেক, চুয়াডাঙ্গা, গুচ্ছগ্রাম, সবুজবাগ, রগুনারচর ও ডিয়ারাসহ ৬টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জন্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনারগাঁয়ের মূল ভূখন্ড থেকে মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়েছে। ৫৪৭ দশমিক ৮৪ একর আয়তনের এ চরে ১.৫ কিলোমিটার সাব মেরিন ক্যাবল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ১৩ কিলোমিটার লাইন টেনে মোট ১২৫২টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে৷
আপনার মতামত জানান