ধনী সাহাবির মানবসেবা

প্রকাশিত



ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর নিয়ামত। ধন-সম্পদ থাকলে মহান আল্লাহর আর্থিক ইবাদতগুলো সহজে করা যায়। সঠিক পথে ধন-সম্পদ অর্জন ও ব্যয় করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। ধন-সম্পদ থাকলেই যে সে পাপী হয়ে যায়, পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, বিষয়টি এমন নয়। বরং ধন-সম্পদপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যারা মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে নিজেকে পরিচালিত করে, তারা অবশ্যই মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমত অর্জনের সুযোগ পায়। এমনই একজন সাহাবির নাম আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবির একজন এবং তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের জন্য ওমর (রা.) কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যবিশিষ্ট শুরা কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি রাসুল (সা.)-এর ভায়রা।

ইসলামের প্রথম দিকে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) তাঁদেরই একজন। আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর বন্ধুত্ব। তাঁর আহ্বানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। (আত তাবকাতুল কুবরা : ৩/৯২)

আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। রাসুল (সা.) তাঁর সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করেছিলেন এবং সে দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন। যার ফলে তিনি একসময় অঢেল সম্পদের মালিক হন। তবে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য তাঁকে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করেনি। তিনি দান-সদকা করতে বেশি ভালোবাসতেন। একবার তিনি রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় নিজের সমুদয় সম্পদের অর্ধেক সদকা করেন। এরপর ৪০ হাজার দিনার সদকা করেন। এরপর ৫০০ ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য প্রস্তুত করে দেন। এরপর ৫০০ উট। এসব তাঁর ব্যবসায় অর্জিত সম্পদ। কথিত আছে যে একদিনেই তিনি ৩০টি গোলাম মুক্ত করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি বদরি সাহাবিদের জন্য জনপ্রতি ৪০০ দিনারের অসিয়ত করে যান। তখন ১০০ বদরি সাহাবি জীবিত ছিলেন। সবাই ৪০০ দিনার করে লাভ করেছেন। (আল-ইসাবাহ : ৪/২৯১, ২৯৩, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/১৬৩)

একবার তাঁর বিশাল এক বাণিজ্য-কাফেলা সাত শ উট বোঝাই করা ছোলা, আটা ও অন্যান্য মুদিসামগ্রী নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করে। বিশাল এই বাণিজ্য-কাফেলা মদিনাজুড়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই খবর আয়েশা (রা.)-এর কাছে পৌঁছার পর তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আবদুর রহমান হামাগুড়ি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুর রহমান এ কথা শোনামাত্রই আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, আমি আপনাকে সাক্ষ্য করে বলছি, আমার এ বিশাল বাণিজ্য-কাফেলা ও সব পণ্য এমনকি উট ও তার হাওদাসহ সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করে দিলাম। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/১৬৪)

তিনি শুধু দান-সদকার মাধ্যমে ইসলামের খিদমত করেছেন বিষয়টি তা নয়, বরং নিজের জীবন বাজি রেখে বদর, উহুদ, খন্দকসহ সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দেন। উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক বিপর্যয় মুহূর্তে রাসুল (সা.)-কে রক্ষা করার জন্য যে ১৪ জন সাহাবি নিজেদের মানবঢালরূপে ব্যবহার করেছেন, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) তাঁদেরই একজন। (আত তাবকাতুল কুবরা : ৩/৯৫)

ইবনে সাদ (রহ.)-এর বর্ণনামতে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ৭৫ বছর বয়সে, আর ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর বর্ণনামতে ৭২ বছর বয়সে ৩২ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে মদিনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।

আপনার মতামত জানান