দৃষ্টিনন্দন জয় বাংলাদেশের

প্রকাশিত



সাকিব আল হাসান যখন ৬৪ রানে আউট হন, টিভি স্ক্রিনে দেখা মিলল হতাশ বাংলাদেশ সমর্থকেরা মাথায় রাখলেন হাত। হতাশ হওয়ার কারণও স্পষ্ট, ১০.১ ওভারে সাকিব, লিটন, রনি ও শান্তর উইকেট পড়ে যাওয়া মানে অনেকেই হয়তো বাংলাদেশের হারই ধরে নিয়েছিলেন।


এরপরই তাওহীদ হৃদয় ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি সমর্থকদের মুখে হাসি ফেরালেন। কিন্তু জয় যখন হাতের নাগালে, শেষ ওভারে প্রয়োজন ৬ রান, তখন বাজে শট খেলে একে একে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন মিরাজ, তাসকিন ও নাসুম। করিম জানাত হ্যাটট্রিক করলেও প্রথম বলে চার মেরে কাজটি সহজ করে দিয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। পঞ্চম বলে শরীফুল ইসলাম চার মেরে বাংলাদেশের ২ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন।


তবে আলাদা করে জয়ের কৃতিত্ব হৃদয় ও শামীম হোসেনকেই দিতে হবে। পঞ্চম উইকেটে দুজনের ৭৩ রানের জুটিতে হারের শঙ্কা দূরীভূত হয়। ১ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখে আফগানিস্তানের দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে বাংলাদেশ। ৩২ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কা। শামীমের ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৩৩ রান। আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।

আফগান বোলারদের বিপক্ষে শুরু থেকেই সংগ্রাম করছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ৩৯ রানেই তিন টপ অর্ডার ব্যাটারকে ড্রেসিংরুমে ফেরান ফারুকি-মুজিবরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই একটি চার মেরে ফেরেন রনি তালুকদার। ফজলহক ফারুকির ব্যাক অব লেংথের ডেলিভারির লাইন বুঝেই উঠতে পারেননি রনি। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পের লালবাতি জ্বালিয়ে বল।

দ্বিতীয় উইকেটে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত দেখে-শুনেই ব্যাটের ব্যবহার করছিলেন। কিন্তু মুজিব উর রহমানের করা ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে শরীরে লেগে স্টাম্পে লাগে বল। তাতে লিটন ও শান্তর জুটি ২৫ রানেই ভেঙে দেন স্পিনার মুজিব। ১২ বলে ১৪ রান আসে শান্তর ব্যাট থেকে।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পারে মাত্র ৩৭ রান। এরপরই ১৯ বলে ১৮ রান করে ফেরেন লিটন। হজরতউল্লাহ ওমরজাইয়ের করা শর্ট বল মারতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। বল হাতে জমা করতে ভুল করেননি রশিদ খান।

চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসান ও তাওহীদ হৃদয় যোগ করেন ২৫ রান। পেসার ফরিদ আহমেদের করা ১১তম ওভারে ডিপ কাভারে করিম জানাতকে ক্যাচ দিয়ে ১৭ বলে ১৯ রানে আউট হন সাকিব। এরপরই হৃদয় ও শামীমের ম্যাচ জেতানো জুটি।

এর আগে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৫ ওভার পর্যন্ত আফগানিস্তানকে বেশ চাপেই রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষের ৫ ওভারে সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি বোলাররা। মোহাম্মদ নবী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সিলেটে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৫৫ রানের লক্ষ্য দেয় আফগানিস্তান।

১৩.৫ ওভারে যখন আফগানিস্তান ৫ উইকেট হারায়, তখন তাদের রান ছিল ৮৭ রান। ষষ্ঠ উইকেটে নবী ও ওমরজাই ৩১ বলে ৫৬ রানের কার্যকরী এক জুটি গড়েন, যার সৌজন্যে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান করে আফগানিস্তান। ১৮ বলে ৪ ছক্কায় ৩৩ রান করেন ওমরজাই। ৪০ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন নবী। টি-টোয়েন্টিতে নিজের পঞ্চম ফিফটিতে মেরেছেন ৬টি চার ও একটি ছক্কা।

এর আগে ৩২ রানেই আফগানিস্তানের তিন টপ অর্ডারের উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু তিন আফগান ব্যাটার যেভাবে ফিরলেন, তা ছিল একরকম বিস্ময়ের মতো। তিনজন বাউন্ডারি মেরেই ড্রেসিংরুমে ফিরলেন।

টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম দুই ওভারে ১০ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। নাসুম আহমেদের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই বাঁহাতি ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই কাউ কর্নার দিয়ে বিশাল এক ছক্কা মারেন। তবে পরের ডেলিভারিতেই স্কয়ার লেগে তাওহীদ হৃদয়কে ক্যাচ দিয়ে ৮ রানে ফেরেন জাজাই।

দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে তাসকিন আহমদেকে একটি ছক্কা মেরেছিলেন আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলেও তাসকিনকে একটি চার মারেন গুরবাজ। চতুর্থ বল ডট গলেও পঞ্চম বলে আবারও বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে মেহেদী হাসান মিরাজকে ক্যাচ দেন এই আফগান ওপেনার। ১১ বলে ১৬ রান আসে গুরবাজের ব্যাট থেকে।

তিনে ব্যাটিং করা ইব্রাহিম জাদরানও পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে শরীফুল ইসলামকে উইকেটকিপারের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন। পরের বলেই দারুণ এক আউট সুইয়ে শরীফুল ফেরান ইব্রাহিমকে। ৮ রান করে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন তিনি।

৫২ রানে করিম জানাতকে ফেরান সাকিব আল হাসান। ৩ রান করেন জানাত। এরপর নাজিবউল্লাহ জাদরান ২৩ বলে ২৩ রান করে ফেরেন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে। ৩ রানে ফেরেন রশিদ খান। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাকিব দুটি, তাসকিন, মিরাজ, নাসুম, মোস্তাফিজ ও শরীফুল একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

আপনার মতামত জানান