দুই বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, বাড়ছে লোডশেডিং

কারিগরি ত্রুটির কারণে বড় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় দেশে আবারও বাড়তে শুরু করেছে লোডশেডিং। এই মুহূর্তে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই। কারণ সামিটের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় গ্রিডে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও তা সরবরাহ করতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।এতে শহরের পরিস্থিতি মোটামুটি সামাল দেওয়া গেলেও শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে আবারও ব্যাপক হারে লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
বিপিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, কয়লাচালিত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। কারিগরি ত্রুটির কারণে গত ১০ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। আবার ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল।
কিন্তু গত বুধবার আদানির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগের দিন মঙ্গলবার কারিগরি ত্রুটির কারণে একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে দিনে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের উত্পাদনে ফিরতে আরো এক মাস লাগতে পারে।
গত দুই-তিন দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
আর রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে গড়ে দিনে চার থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশোডিং হচ্ছে। বিশেষ করে দুপুর ও সন্ধ্যায় বিদ্যুত্ থাকছে না। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই লোডশেডিং মেনে নিতে পারছেন না গ্রাহকরা। কারণ চারদিকে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজমান থাকায় একটু অন্ধকার হলেই শঙ্কা তৈরি হচ্ছে জনমনে। যে কারণে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত চান গ্রাহকরা।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের সাইফুল আলম তুহিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন তেমন লোডশেডিং ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার আমাদের গ্রামে দিনে-রাতে মিলিয়ে প্রায় আট থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মতো বিদ্যুত্ ছিল না। গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যাচ্ছে না।’
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা স্বর্ণা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের এখানে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং হয়েছে। একবার বিদ্যুত্ গেলে দেড়-দুই ঘণ্টার আগে আসছে না। শুক্রবারও একই অবস্থা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হয়েছে। তবে দিনের চেয়ে রাতের বেলা বিদ্যুতের সমস্যা বেশি।’
এদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত্ উৎপাদনও বাড়াতে পারছে না বিপিডিবি। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হতো প্রায় এক হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দুটি টার্মিনালের মধ্যে একটি এলএনজি টার্মিনাল গত ২৭ মে থেকে বন্ধ। অন্য টার্মিনাল থেকে বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। আড়াই মাস আগেও গ্যাস থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। বর্তমানে হচ্ছে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘাটতি থাকায় রাজধানীর আশপাশের এলাকায় এবং রাজধানীর বাইরে কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়বে। আদানির ইউনিট চালু হতে আরেকটু সময় লাগবে। তবে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে শনিবার ও দ্বিতীয় ইউনিট থেকে রবিবার উৎপাদন শুরুর কথা। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আপনার মতামত জানান