ত্যাগী নেতার মূল্যায়ন বক্তৃতায়, বাস্তবে শূন্য
দলের দুঃসময়ে জীবন বাজি রেখে রাজপথ কাঁপিয়ে জেল-জুলুম ও কারাবরণ করে নির্যা্তনের শিকার হয়েছেন। যারা দলের জন্য নিজের জীবন, যৌবন সহায় সম্বল অকাতরে বিলিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তাদের মূল্যায়নে নেতারা বক্তৃতায়, মঞ্চে সভা সেমিনারে প্রশংসার ফুলঝুরি টুটিয়ে দেন। বাস্তবে সব অন্তসার শূন্য। খাতা কলমে তাদের নামই খুজে পাওয়া যায় না। তারা দলের হাইকমান্ডের সাথে একবার দেখা করার জন্য বছরের পর বছর ঘুরে বেড়ান। সুযোগ হয় না। আর রিজেন্টের সাহেদদের জন্য সব দরজা খোলা থাকে। তারা ইচ্ছে হলেই চড়ুই পাখির মতো ফুরৎ করে চলে যান সবখানে। এখানেই ত্যাগী আর ভোগীর তফাৎ।
রাজনীতির মাঠে হিসাব মিলাতে না পারলে ভুল হওয়া টাই স্বাভাবিক। অনেকেই হিসাব মিলাতে গিয়ে রাজনীতি ছেড়ে এখন নির্বাসনে। সেলফীবাজি আর নেতাবাজী করতে করতে আসল রাজনীতি এখন লাইফ সার্পোটে।
এখনকার রাজনীতি একেবারেই ভিন্ন। দেশ ডিজিটাল হওয়ার সাথে সাথে রাজনীতিও ডিজিটাল রুপ নিচ্ছে।যার ফল হচ্ছে ভয়াবহ। এমন একটা প্লাটফর্ম প্রতিনিয়ত হিংসাত্মক করে তুলছে সব কিছুকে। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে সবাই।কারণ তারা পায় না তাদের যথাযথ মর্যাদা।
আমাদের দেশে একটি উক্তি রয়েছে ‘ধাক্কা খাইলে হুশ হয়’ তেমনি দলের দূদিনে ত্যাগী কর্মীর প্রয়োজন হয়।কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনীতি এমন একটি পরিস্থিতিতে রয়েছে যা মোটেই শোভনীয় নয়।তৃণমূলে নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, দলের জন্য ছুটে বেড়ান। ভোটের সময় গ্রামের পর গ্রামে,রোদ বৃষ্টি কোনো কিছুর অপেক্ষা না করে নিজেদেরকে মানুষের কাছে ভিক্ষুকের মতো অর্পণ করে ভোট চান নিজ দলের জন্য।দলের সংকঠময় মুহুর্তেও কামালরা হাল ধরেন শক্ত ধরে।কিন্তু বিনিময়ে তারা কি পায়? পায় না তাদের সঠিক মূল্যায়ন।
যখন কোনো আন্দোলন কিংবা সভা, সমাবেশ মিছিল করতে হয় তখন প্রয়োজন পড়ে তৃণমূলের নিবেদিত কর্মীদের কারণ ওরা পারে নিজেদের জীবন বাজি রেখে রাজ পথে মিছিল করতে।দলের প্রতি কমিটমেন্টের কারনে এরা ঘরে বসে থাকতে পারে না। নিজের জীবন বাজি রেখে মামলা হামলা উপেক্ষা করে আন্দোলন সফল করে কিন্তু তাদের কোনো মূল্যায়ন হয় না।
রাজনীতিতে এমন হাজার হাজার কর্মী রয়েছে যারা দলের দূরদিনে রাজপথে মিছিল করেছে, এখন তার কোনো মূল্যায়ন নেই। দুখের বিষয় হলেও সত্য যারা কোনো দিন মাঠে কাজ করে নি বরং ঘরে বসে, বড় বড় গাড়ি চড়ে, ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে তারাই আজ ত্যাগী নেতাদের চেয়ে ফায়দা লুটছে বেশি।
বিশেষ করে কোনো জেলা, উপজেলা, থানা কমিটির ক্ষেত্রে এই অবমূল্যায়ন দেখা যায়।পদবাণিজ্যের মাধ্যমে অনভিজ্ঞ, ফটোবাজদের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দেওয়া হয়ে থাকে । বিশেষ করে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অভিজ্ঞ লোকদের দেওয়া হয় না।
দল যখন ক্ষমতায় আসে তখন ফায়দাটা লুটে দূর্নীতিবাজ, রাজাকারের ছাওয়াল পাওয়াল ও ছবি বাজরা,তখন দলের সবচেয়ে তৃনমূলের মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা হয় বঞ্চিত।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা এমন ধ্বংসাক্তক রাজনীতিতে দল সবচে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফায়দা লুটছে সুযোগ সন্ধানীরা। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে নতুবা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে নতুন প্রজন্ম। একসময় স্বার্থবাজ ছাড়া কেউ রাজনীতি মুখী হবে না। আর তা হবে দেশের জন্য রাজনৈতিক দলের জন্য অশনিসংকেত।
আপনার মতামত জানান