কীভাবে টকশো’তে ‘প্রতারক’ সাহেদ? (ভিডিওসহ)

প্রকাশিত


ভয়ঙ্কর প্রতারক সাহেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে পুলিশ সদর দফতরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো বঙ্গভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব অনুষ্ঠানে ছিল সাহেদের সরব উপস্থিতি। গত ১০ বছর ধরে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে দিয়ে নিজেকে জাহির করতেন। সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে ‘বিডি ক্লিক ওয়ান’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি খুলে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্যের পদ বাগানোর পর তার প্রতারণার মাত্রা বেড়ে যায়।

সাহেদ গ্রেপ্তারের পর থেকেই তার নানা অপকর্ম সামনে আসছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি বলছেন, সরকার কাউকে ছাড় দেবে না, যত অন্যায় করুক। সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে যারা পরিচয় দিয়ে নানা ফায়দা নিচ্ছে তাদের অ্যাড্রেস করা হচ্ছে।

টেলিভিশনের ওই টকশোতে বলছেন, এই যে আমি ঢাকায় ত্রিশ বছর ধরে আছি। আমি কোনোদিন ক্যাসিনোর কথা শুনি নাই। অথচ দেখেন এই শহরে কত ক্যাসিনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সরকার অপরাধীকে ছাড় দেবে না বলে নিজের দলের ভেতর থেকে পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরু করেছে। এই জিকে শামীমের কথাই ধরুন, সে কি ছাড় পেয়েছে?

টকশো’তে যেভাবে কথা আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলেছেন শাহেদ, সেসব যে তিনি নিজেই করছেন তা কে জানতো। ক্রমাগত চেহারা পালটে সাহেদ ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বস্ততার তালিকায়। যার কারণে অবাধে বিচরণ করেছেন সর্বত্র।

মোহাম্মদ সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। এখন ধরা পড়েছেন। অবৈধ হাসপাতালের মালিক, একটি নয় দুটি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে করোনা চিকিৎসার চুক্তি করেছে তার রিজেন্ট হাসপাতাল। অনেক সাংবাদিক ও তাদের পরিবার চিকিৎসা নিয়েছেন।

পীর হাবিব তাঁর নিজের একটি কলামে লিখেছেন, তার সঙ্গে প্রথম পরিচয় জিটিভির টকশোতে গিয়ে। সেখানে সে অতিথি। পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ধানমন্ডির অফিসে। কাদের ভাই বললেন, কাঁদছিল। লিভার সিরোসিস, বেশি দিন বাঁচবেন না! পরে টিভিতে নিয়মিত টকশোতে দেখি। বঙ্গভবন থেকে গণভবন হয়ে সব সামাজিক, সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে দেখি। কারও কারও রাতের আড্ডা থেকে সবখানে।

তিনি বলেন, এখন দেখি কত বড় অপরাধে হাসপাতাল সিলগালা পলাতক। তাহলে কীভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে এতসব দিল? কীসের বিনিময়ে কারা দিল? এখন যারা সাহেদকে হাওয়া ভবনের লোক বলেন লজ্জা করে না? আওয়ামী লীগ ১১ বছর ক্ষমতায়। তাকে দলের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য করল তার দলের জন্য ত্যাগ দেখে নয়? অবৈধ ডাক্তার, আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া মেজর, কত কিছু ধরা পড়ে! আজ দেখি অবৈধ হাসপাতাল! কীভাবে? কারা জড়িত? কিছু হবে এদের!

পীর হাবিবুর রহমান বলেন, নাগরিক টিভিতে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক অনুজ সাবেক সহকর্মী সেখানে এক নব্য ব্যাংক মালিককে টকশোতে আনেন। আমি পছন্দ করিনি। ছেড়ে দিয়েছি। যোগ্যতা থাকতে হবে। অনেক টিভির টকশোতে যারতার সঙ্গে বসবো না বলে মুখের ওপর না করেছি। টকশো ও সামাজিকতা থেকে গুটিয়ে নিয়েছি। যোগ্যদের কদর নেই অযোগ্য বাটপাড়দের আনে কেউ কেউ। টিভির দায়িত্বশীলদের এটা দেখা উচিত। তিন-চারজন অ্যাংকর কলুষিত করেছে গণমাধ্যম।

আপনার মতামত জানান