ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার যান

প্রকাশিত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় বৈধ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকের মতো তিন চাকার যান। স্বস্তির ঈদ যাত্রায় তিন চাকার যানই বড় বাধা বলে মনে করেন চালক ও যাত্রীরা। মহাসড়কে চলাচলকারী বাস, ট্রাকসহ বড় যানের চালক ও মালিক বরাবরই এসব তিন চাকার যানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

পুলিশ প্রশাসনও বলছে, তিন চাকার যানবাহন চলাচল শূন্যের কোঠায় আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।


তবে বাস্তব চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। সোনারগাঁ উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নামলেই অটোরিকশা, ইজি বাইক, টমটম, ভটভটি, নছিমনসহ বাহারি নামের তিন চাকার যানের দেখা মেলে। কোথাও ‘টোকেন’ আবার কোথাও ‘লাইন খরচ’ দিয়ে মহাসড়কে চলছে এসব যানবাহন।

হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ অংশে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।


দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে আছে বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, মদ্যপ অবস্থায় কিংবা ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো, বারবার লেন পরিবর্তন, গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোনে কথা বলা ইত্যাদি। তবে চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, মহাসড়কে তিন চাকার যানের অবাধে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের কাঁচপুর হাইওয়ে থানার কাঁচপুর, মদনপুর, কেওঢালা, লাঙ্গলবন্দ, মোগরাপাড়া ও মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহন যাত্রী পরিবহন করছে। এসব যানের বেশির ভাগ চালকই অপেশাদার ও অদক্ষ।

শিশু ও কিশোর চালকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। যেখানে পুলিশ পাহারা আছে সে জায়গা কৌশলে এড়িয়ে চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বলেন, ‘প্রতি মাসে এক হাজার টাকার ‘টোকেন’ নিয়ে মহাসড়কে অটোরিকশা চালাতে হয়। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের দালাল ও লাইনম্যানরা এই টোকেন সরবরাহ করেন। টোকেনের টাকা হাইওয়ে পুলিশের পকেটে চলে যায়।

তাই তাঁরাও নির্বিঘ্নে যাত্রী পরিবহন করছেন।’
নাহিদ নামের এক কিশোর চালক বলেন, ‘পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝেমধ্যে অটোরিকশা চালাই। পুলিশের হাতে ধরা খেলে নগদ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হয়। যারা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে চালায় তাদের গাড়ি পুলিশ ধরে না। মাসে এক হাজার টাকা দিলে কেউ মামলা দেয় না।’

দূরপাল্লার বাসের চালক রশিদ মণ্ডল বলেন, ‘মহাসড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ নছিমন, করিমন, ভটভটি, ইজি বাইক আর সিএনজি। এসব যানবাহনের চালকরা কোনো ট্রাফিক আইন মানে না।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরনবী বলেন, ‘মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত তিন চাকার যান চলাচলের জন্য আমরা বাইলেনের আবেদন করেছি বহুবার, কিন্তু কোনো প্রতি-উত্তর পাইনি।’

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি রেজাউল হক জানান, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে তিন চাকার যান মহাসড়কে উঠে যায়। কিন্তু ঈদে সবার বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে।

টোকেন ও মাসিক চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার থানার কেউ যদি টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল শূন্যের কোঠায় আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
সুত্র: কালের কন্ঠ

আপনার মতামত জানান