জাতীয় কবির স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম প্রয়াণ দিবসে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কবির সমাধি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অবস্থিত আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে কবি পরিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সকালে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে কবির নাতনি খিলখিল কাজী সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘নজরুল বাংলাদেশের জাতীয় কবি তা সরকারিভাবে গেজেট এখনো করা হয়নি। তিনি জাতীয় কবি, সরকারিভাবে গেজেট করা উচিত বলে আমি মনে করি। যুগ যুগ পরে, হয়তো এমন একটি সময় আসবে যখন কেউ জানতে পারবে না যে, কাজী নজরুল ইসলাম এ দেশের জাতীয় কবি ছিলেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পরিবারের দাবি এটি করা হোক।’
কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি, তা আমাদের মেধায় আছে, মননে আছে। কিন্তু তা কোনো সরকারি গেজেটে নেই। অনেকের কথা থাকে, লিখিত রাখার কি দরকার আছে? আমরা তো জানিই যে তিনি জাতীয় কবি। সে কথাই যদি হতো, তাহলে কোথাও কোনো স্বীকৃতির প্রয়োজন হতো না। কোথাও কোনো কাগজে লিখতে হতো না। স্বাক্ষর-সিলের কোনো দরকার ছিল না। কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি, সে হিসেবেই তার স্বীকৃতি হওয়া উচিত। স্বাধীনতার এত বছর পর আজ তার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী, এতদিনেও আমরা তাকে স্বীকৃতি দিতে পারিনি।’
সকাল সাড়ে ৯টায় কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। আমাদের চেতনায় তিনি চির জাগরূক থাকবেন। তার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এ দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বৃক্ষের মূল উৎপাটন করবো বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। একইসঙ্গে নজরুলের চেতনায় সমৃদ্ধি ও সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণ করবো।’
সকাল ৭টায় কবির সমাধিতে ফুল দেওয়া হয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এসময় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন শান্তি ও সম্প্রীতির কবি। নজরুলের কীর্তি ও রচনা চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের সাহিত্য অঙ্গন আরও এগিয়ে নেব।’
বিএনপির পক্ষ থেকে নজরুলের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পরে রিজভী বলেন, ‘যখন গণতন্ত্রের কথা বলা হয়, তখন কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন স্বেচ্ছায় নির্যাতন ভোগ করার। তিনি আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। দুঃশাসনের এ যুগে তিনি আমাদের প্রতিটি ক্ষণ এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন, এ দুঃসময় অতিক্রম করার জন্য, সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি আমাদের পাশেই আছেন। তিনি আছেন বলেই এ নিপীড়নের মধ্যেও আমরা মিছিল করছি, সত্য উচ্চারণ করছি। তিনি আছেন বলেই আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় নজরুলের সমাধিতে। শ্রদ্ধা জানানো শেষে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে প্রেরণার এক অসাধারণ উৎস কাজী নজরুল ইসলাম। কঠিনতম সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নজরুলের গান ও কবিতা।’
আপনার মতামত জানান