জনপ্রিয়তা ও প্রচারনায় এগিয়ে বাবু, প্রতিকে সোহাগ রনি
মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহনের বাকি রয়েছে মাত্র ২দিন। আজ রাত বারোটার পর থেকেই বন্ধ হচ্ছে প্রচার প্রচারনা। এরই মধ্যে হিসেব কসতে শুরু করেছেন ভোটাররা। শেষপর্যন্ত কার প্রতীকে সিলটা মারবেন ভেতরে ভেতরে সেই সিদ্ধান্ত হয়তো নিয়েও ফেলেছেন তারা। তবে শেষমুহুর্তে মাঠ গরম রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছেন প্রার্থীরা।
মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। দলীয় প্রতিকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত সোহাগ রনি নৌকা প্রতিকে, ইসলামী আন্দোলনের দেলোয়ার হোসেন হাতপাখা প্রতিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। আনারস প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুইবারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ, ঘোড়া প্রতিকে রকসি এবং মোটরসাইকেল প্রতিকে সুরুজ মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত দুই নির্বাচনে আরিফ মাসুদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। বর্তমান চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য আরিফ মাসুদ এবারও নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। এ ইউনিয়নে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সোহাগ রনিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ১৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মাসুদ দলীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষনা করার পর উৎসব আমেজে রূপ নেয় মোগরাপাড়া ইউপি নির্বাচন।
মোগরাপাড়া ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড গ্রাম মহল্লা ঘুরে সর্বস্তরের জনসাধারণের সাথে আলাপ করে একটি জরিপ তৈরি করেছেন এ প্রতিবেদক। জরিপে অংশ নিয়েছেন ১শত সচেতন নাগরিক। তাদের মধ্যে ৬০ জন নিজের মত প্রকাশ করেছেন বাকি ৪০ জন কিছু বলতে রাজী হননি। মতামত প্রকাশ করা ৬০ জন ভোটারের মধ্যে ৩৯ জন ভোটার স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে, ২১ জন দলীয় প্রতিকের পক্ষে রায় দিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া বাকি ৪০ জন ভোটারের উপর নির্ভর করছে জয়পরাজয়। জরিপে অংশ নেওয়া ১শ জন ভোটার জানান, আজ রাত বারোটার পর থেকে শুরু হবে ভোট কেনা বেচা। টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করবে প্রার্থীরা। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে ভোটার ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত। ভোটাররা যদি তাদের মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দেয় তাহলে ভোটের জরিপ পাল্টে যেতে পারে বলেও তারা জানান। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আরিফ মাসুদ জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্বে এগিয়ে আছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিক ভোটারদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না। ভোটাররা প্রতিকে নয় বরং ব্যক্তি ইমেজকেই প্রাধান্য দেয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজ ও গুষ্টিগত ভোটই জয় পরাজয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
তাঁরা আরো জানান, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ভোটগুলো কয়েকভাগে বিভক্ত। আওয়ামী, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত, সাধারন, নিরিহ ও ভাসমান ভোটার।
এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ভোট দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। যেহেতু আরিফ মাসুদ বাবুর পরিবার ৭০ বছর ধরে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের বড় একটা অংশের ভোট তিনি পেয়ে যাবেন। বিএনপি ভোট নৌকায় যাবে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত। যারা ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত তাদের ভোট যাবে হাতপাখা প্রতিকে। হেফাজতের সাথে যারা জড়িত তারা সোহাগ রনিকে কোনভাবেই ভোট দিবেন না এটা অনেকটা নিশ্চিত। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতাকর্মীই বিএনপি থেকে আসা। সাধারন ও নিরিহ ভোটাররা সব সময় শান্তির পক্ষে। সাধারন ও নিরিহ ভোটারদের একটাই চাওয়া যাকে ভোট দিলে এলাকায় শান্তি বিরাজ করবে তাকেই ভোট দিবো। সার্বিকভাবে ভোটের জরিপে এগিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ।
তবে সর্বসাকুল্যে মোগরাপাড়া বাসীর পছন্দ একটাই যাকে ভোট দিলে এলাকায় পূর্বের মতো শান্তি বজায় থাকবে তাকেই ভোট দিবেন। তারা জানান, আমরা এমন একজন চেয়ারম্যান চাই যিনি আমাদের উপকার করতে না পারলেও জেনে শুনে কোন ক্ষতি করবেন না। এখন ১৫ তারিখ পর্যান্ত অপেক্ষা কে হচ্ছেন মোগরাপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান?
নির্বাচন কেমন হবে:
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ইউসুফ-উর-রহমান জানান, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। তিনি বলেন, ইউভিএমে কোন রকম কারুচুপির সুযোগ নেই। বাংলাদেশের ইউভিএম হলো বিশ্বের মধ্যে মধ্যে সবচে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। তিনি জানান, নির্বাচন অবাধ করতে প্রতিটি কেন্দ্রের নিরাপত্তায় স্বশস্ত্র বাহিনীসহ ২২ জন নিয়োজিত থাকবে, মোবাইল টিম থাকবে ৫ টি, স্টাইকিং ফোর্স থাকবে ১টি, ভিজিপি থাকবে এক প্লাটুন।
সোনারগাঁ থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে নির্বাচনকে শতভাগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আমাদের অফিসার টিম মাঠে আছে। কোন রকম নাশকতার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগের দিন থেকে নির্বাচনের পরেরদিন পর্যয়ন্ত আমাদের অফিসার ফোর্স মাঠে অতন্ত্র প্রহরী হয়ে থাকবে। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে কেউ যেন ভূলেও কোন রকম বিশৃঙ্খলার কথা কল্পনায়ও না আনে বলে তিনি হুশিয়ার করে দেন।
আপনার মতামত জানান