ছুটিতে ঘুরে আসুন-সাজেক ভ্যালি
ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হলেই একটু ঘুরেফিরে ক্লান্ত মনকে প্রশান্তি দিতে কার না মন চায়। অনেকে বিদেশ ব্রমণে যান। তবে নৈসর্গিক সৌন্দযে বাংলাদেশ পৃথিবীর সেরা। তাই তো কবি লেছেন, সকল দেশের সেরা সেতো আমার জন্মভুমি। ভাবছেন তাহলে কোথায় যাবেন। কম খরচে ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক প্রকৃতির সাজে অপার্থিব সৌন্দর্য্যে। যোগাযোগেও অভূতপূর্ব উন্নতি হওয়ায়, ভ্রমণ প্রিয়সিদের কাছে এখন প্রিয় গন্তব্যের নাম সাজেক।
সাজেক ভ্যালি যে কোন সময় যাওয়া যায়। তবে শিশিরের স্নিগ্ধতায় পাহাড়ের রুপে আসে লাবণ্যতা। আর ক্ষনে ক্ষনে রুপ বদলানো বিবির মুডের মত সাজেকের রোমান্টিক আবহাওয়ায় আপনি হবেন বিমোহিত। এছাড়াও আকাশ এখানে দিগন্তের নীল ছুঁয়ে পাহাড়ে হেলান দিয়ে ঘুমায়।মেঘ উড়না উড়িয়ে দিগঙ্গনার নৃত্য করে। এর অবস্থান রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় হলেও যোগাযোগ সহজ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে।
খাগড়াছড়ি যখন পৌঁছে জিপ (চান্দের) গাড়িতে যেতে হবে সাজেক। চোখে পড়বে সারি সারি গাড়ি ছুটছে বাঘাইহাট নিরাপত্তা চেকপোষ্ট থেকে। যেতে যেতে দেখা হবে কাসালং, মাসালং, মাইনি সহ উপত্যকার ভাঁজে ছোট ছোট অনেক নদী। তাদের একটি সাজেক। সাজেক নদীর নাম থেকে সাজেক ইউনিয়নের নাম।
বাঘাইহাট থেকে সাজেকের পথটি বেশ রোমাঞ্চকর। আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথে সারি সারি জিপ গাড়ি ছুটে চলার দৃশ্য এবং বাতাসে দোল খাওয়া গুল্মলতায় মনকেও দুলিয়ে তুলবে।
মনে হবে আদিবাসী শিশুদের মত হাত নাড়িয়ে গুল্মলতাও অভিবাদন জানাচ্ছে। উঁচু নিচু পাহাড়ি পথে রোলার কোষ্টারের অনুভূতি বেশ উপভোগ্য। টাইগার টিলা আর্মি চেকপোষ্ট ও মাচালং বাজারে বিরতির পর পৌছে যাবেন সাজেক। সেখানকার হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে নবউদ্যেমে ঘুরতে থাকুন।
ছোট ফুটপাতের পরিচ্ছন্ন সাজেকের প্রথমে রুইলুইপাড়া। যেখানে হোটেল ও রিসোর্টগুলো আর শেষ মাথায় কংলাক পাহাড়ের চুড়ায় কংলাকপাড়া। দুই পাড়ার মধ্যে ৩০-৪০ মিনিট হাটার দুরত্বের কিছুটা পাকা ও কিছুটা মেঠপথ।
এখানে লুসাই, পাংকুয়া ও ত্রিপুরাদের বসবাস। প্রকৃতির মত সুন্দর পাহাড়ের সহজ সরল আদিবাসী মানুষের সংগ্রামী জীবন থেকে হয়তো অনেক কিছু শেখার আছে। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। সাজেকের পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও উত্তরে ত্রিপুরা রাজ্য।
পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং দক্ষিনে রাঙ্গামাটির লংগদু। এদের শিক্ষা, সামাজিক বন্ধন ও জীবন প্রবাহ প্রতিবেশী দেশের মিজোরামের সঙ্গে। কংলাকের চুড়ায় না উঠলে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ বৃথা। এখান থেকে সবুজ পাহাড় ও মেঘের সমুদ্র দেখে মনে হবে দার্জিলিং এসেছেন।
কংলাক পাহাড় থেকে নামতে নামতে চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। রুইলুই পাড়ার রাতের সাজেক সাঁজে মায়াবী এক অপ্সরায়। দেখে মনে হতে পারে দেশের ভেতর অন্য কোনো এক দেশ। বাম্বু চিকেন, বারবিকিউ, ক্যাম্প ফায়ার, ফানুস উড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন ভ্রমণ আনন্দকে।
পর্যটকরা সাজেক বলতে রুইলুই ও কংলাক পাড়াকেই বুঝে থাকে। কিন্তু এছাড়াও আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। সাজেক উপত্যকার এসব অদেখা গ্রাম ছবির মতো সুন্দর। নিরাপত্তা ও যোগাযোগে পিছিয়ে পড়ার কারণে মানুষের দৃষ্টি সীমার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
পাহাড়ের ভাঁজে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। সঙ্গে ঝলমলে রোধ। চারিদিকের সব কিছু ক্রিষ্টাল ঝকঝকে। উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, নামহীন বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্যে পাহাড়ের ঢালু গড়িয়ে কল্পনার রাজ্য রিছাং ঝর্ণা। সেখান থেকে আরবারি পাহাড় বা আলুটিলা।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৭ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত আলুটিলা গুহা বা রহস্যময় সুড়ঙ্গ। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। অন্ধকার গুহার ভিতরটা বেশ রোমাঞ্চকর। ঝুলন্ত সেতু দেখে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হবে নিশ্চিত।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেনঃ মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিআরটিসি, শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহনের বাস খাগড়াছড়ি এবং দিঘীনালা যায়। ভাড়া খাগড়াছড়ি ৫৮০ টাকা এবং দিঘীনালা ৬০০ টাকা। খাগড়াছড়ি এবং দিঘীনালা থেকে সিএনজি অথবা মোটরসাইকেলে করে ঘুরে আসতে পারবেন সাজেক ভ্যালি।
যেখানে থাকবেনঃ খাগড়াছড়ি ও দিঘীনালায় কয়েকটি হোটেল আছে। এছাড়া দীঘিনালা গেস্ট হাউজ নামে একটি গেস্ট হাউজও আছে। এখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে থাকার জন্য রুম পাওয়া যাবে।
আপনার মতামত জানান