উপমহাদেশের প্রথম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় সোনারগাঁয়

প্রকাশিত

ডেইলি সোনারগাঁ >>
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি সর্বপ্রথম মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলে বাংলায় ইসলাম ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। প্রত্নতাত্বিক সুত্র এবং ভৌগলিক বিবরণ থেকে জানা যায়, ত্রয়োদশ শতাব্দির পর থেকে আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশে এসেছেন অসংখ্য অলি-আউলিয়া, পীর-দরবেশ, সুফি-সাধক, ধর্ম-প্রচারক ও আধ্যাত্মিক সাধক। যাদের সাধনায় ধন্য আমাদের এ পুণ্যভুমি বাংলাদেশ।

 

শেখ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (রহঃ) এর প্রতিষ্ঠিত সোনারগাঁয়ের মাদ্রাসাই ছিলো উপমহাদেশের ইলমে হাদিসের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠ। আনুমানিক ১২৭৯-১২৮৫ সালে বর্তমান মোগরাপাড়া দরগাবাড়ি প্রাঙ্গণে গড়ে তোলেন একটি বৃহৎ মাদ্রাসা ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। যা পরে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করে। হাসিদ ও ইসলামী আইনশাস্ত্রের পাশাপাশি তিনি ভেষজশাস্ত্র, গনিত,ভূগোল এবং রসায়নশাস্ত্রেও একজন পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন বলে সেই লাইব্রেরী ও ছিলো বেশ আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছাত্ররা এলম অর্জনের উদ্দেশ্যে ছুটে আসত। ধারনা করা হয়, তখন এ মাদরাসার ছাত্রসংখ্যা ছিলো ১০ হাজার ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশ্বকোষ মতে, এর মধ্য দিয়েই উপমহাদেশের ইতিহাসে হাদিসের আনুষ্ঠানিক পাঠদান শুরু হয়েছে। এ মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহনের জন্য সমবেত হয় সুদূর দিল্লি এবং সেরহিন্দ থেকে আসা ছাত্ররাও। তাছাড়া পূর্ববাংলার রাজধানী হিসেবে সোনারগাঁয়ে বহুসংখ্যক হাদিস বিশারদ সমবেত হন। এমনকি বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলায় ১৩৪৫ সালে আগমণ করলে তখন তাঁর রেহালায়ে এবনে বতুতায় এই ঐতিহাসিক মাদ্রাসার কথা উল্লেখ করেন।

শায়খ আবু তাওয়ামা ৭০০ হিজরী মোতাবেক ১৩০০ খ্রীস্টাব্দে মৃত্যু বরণের পরও এই মাদ্রাসা অনেক দিন স্থায়ী ছিলো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এক সময় হারিয়ে যায় এই বিদ্যাপীঠ, এখন সে মাদ্রাসাটির অস্থিত্ব আর নেই। ঐতিহ্যবাহী সেই দরসগাহে হাদিসের প্রায় সবটুকু কালের গর্ভে বিলিন হয়ে গেলেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে চুন-সুরকির গাঁথুনির প্রধান ফটকটি।

রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এখন তা জড়াজীর্ণ। সড়েজমিনে দেখতে পাওয়া যায়, অবহেলা আর অযত্নে একটি ভগ্নপ্রায় দালান কোনমতে টিকে আছে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, দালানের অলঙ্কৃত তোরণ, প্রশস্ত কক্ষ এবং দোতলায় ওঠার সিঁড়ি প্রমাণ করে এ দালানই মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দেয়ালগুলো প্রসস্ত এবং পুরো, ইটগুলো ছোট ছোট পাতলা জাফরি ইট। চারপাশের দেয়ালে মেঝের তিনফুট উপর থেকে প্রায় ছাদ পর্যন্ত রয়েছে ইটের গাঁথুনিতে তৈরি সেলফ। এটিই ছিলো এক সময়ের সরগরম বিদ্যাপিঠের সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। জানালা বিহীন কামরাটির (কক্ষ) ডান পাশ দিয়ে মাটিরতলে নেমে গেছে সরু একটি সিঁড়ি। দুজন একসঙ্গে নামার উপায় নেই। ৮ থেকে ১০ ফুট সিঁড়ি ভাঙার পর মোড় নিতে হয় হাতের বাঁ দিয়ে। অন্ধকারে চোখের আলো কোন কাজে আসে না। গা ছমছমে পরিবেশ। কিছুক্ষণ পর চোখের আলো ফিরে আসবে। এলাকার লোকেদের বিশ্বাস ভিতরে গিয়ে আল্লাহ্’র জিকির করলে সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়।

ছয়ফুট উচ্চতার ৮ থেকে ১০ বর্গফুটের একটি কামড়া। জনশ্রুতি আছে, এ আন্ধার কুটির ছিলো হযরত শাহ্ শরফুদ্দিনের এবাদত খানা। এখানে শায়খ নিরবে নিভৃতে ইবাদত করতেন। এলাকাবাসী বলেন কয়েক বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এর স্মৃতি সংরক্ষনের কথা বললেও তা আর বাস্তবতা পায়নি। দরগাবাড়ির খাদেমদার সৈয়দ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘অনতিবিলম্বে তা সংরক্ষণ করা না গেলে অচিরেই ধ্বংসস্তুপে পরিনত হবে ঐতিহাসিক এ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্তিত্ব। হাদিস শাস্ত্রের সঙ্গে এদেশের প্রাচীন ও নিবিড় সম্পর্কের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে স্থানটি অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।

কিভাবে আসবেন :
ঢাকার গুলিস্তান ষ্টেডিয়াম থেকে (পাতাল মার্কেট সংলগ্ন) দোয়েল, স্বদেশ কিংবা বোরাক গাড়িতে উঠে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা নেমে দরগাহ বাড়ি হযরত শাহ্’র মাজারের কথা বললে ২/৩ মিনিটে যে কোন গাড়ি ( রিক্সা, অটো কিংবা সিএনজি)পৌছে দিবে। ভাড়া নিবে ১০ টাকা।কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে আসলেও একই স্থানে নেমে দেখে আসতে পারবেন উপমহাদেশের প্রথম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন :

আপনার মতামত জানান