চট্টগ্রামে ৫০% কারখানায় বেতন পায়নি শ্রমিকরা

প্রকাশিত

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি >>
আর মাত্র এক কার্যদিবস পরই ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাবে শিল্প-কারখানাগুলোতে। কিন্তু চট্টগ্রামে এখনো ৫০ শতাংশের বেশি কারখানায় শ্রমিকদের মে মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। বোনাস পরিশোধ করা হয়নি এক-তৃতীয়াংশ কারখানায়। শিল্প পুলিশ ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেতন পেলে শ্রমিকরা আগেই বাড়ি চলে যাবে—এই আশঙ্কায় ছুটির আগে শেষ দুই দিন অর্থাৎ আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার সব কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হবে। তবে শেষ সময়ে শত শত কারখানায় একসঙ্গে বেতন-বোনাস দিতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শিল্প পুলিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বৃহত্তর চট্টগ্রামে অবস্থিত তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) ও নন-আরএমজি মিলিয়ে শিল্প-কারখানা আছে এক হাজার ২০২টি। এর মধ্যে ঈদ উপলক্ষে বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ৮৪৯টি কারখানায়। আর মে মাসের আংশিক কিংবা পূর্ণ বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৪৭৯টি কারখানায়। ৬৯৭টি পোশাক কারখানার মধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ৪২৩টিতে, আর বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ১৮৯টিতে। এ ছাড়া নন-আরএমজি কারখানার ৪২৬টিতে বোনাস এবং ২৯০টিতে মে মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেতন ও বোনাস পরিশোধে পোশাক কারখানার চেয়ে অন্য কারখানাগুলো এগিয়ে আছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, অনেক তৈরি পোশাক কারখানার মালিক মূলত বেতন ও বোনাস পরিশোধের ক্ষেত্রে শেষ সময়ের কৌশল বেছে নিয়েছেন। এক কারখানার মালিক বলেন, ‘চাইলে আজকেও শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পুরো পরিশোধ করে দেওয়া যাবে। কিন্তু দেখা যাবে কাল সকালেই অর্ধেকের বেশি শ্রমিক আর কাজে আসবে না। এতে আমার উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখতে হয়।’

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তেমন সমস্যা কিছু দেখা যাচ্ছে না। বেশির ভাগ পোশাক কারখানার মালিক বোনাস দিয়ে দিয়েছেন শ্রমিকদের। অনেকে মে মাসের বেতনও অগ্রিম দিয়ে ফেলেছেন। প্রায় ৪৬টি কারখানা, যারা সমস্যায় ছিল তারাও শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করেছে বলে জেনেছি। মে মাসের পুরো বেতন হয়তো দেয়নি। তবে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ৫০ কিংবা ৬০ শতাংশ, আবার অনেকে বেসিক প্রদান করছে শ্রমিকদের। নেতিবাচক কিছু আশা করছি না।’

শিল্প পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মোহাম্মদ মমতাজ বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষ হওয়ার মতো পরিস্থিতি চট্টগ্রামে এখনো তৈরি হয়নি। অর্ধেকের বেশি কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে। প্রায় ৩০০ কারখানা বেতনও দিয়েছে। এখনো হাতে দুই দিন আছে। আশা করছি, এর মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে চট্টগ্রামে শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা বেতন-বোনাস নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করতে যাবে। যদিও শেষ সময়ে এতগুলো কারখানার একসঙ্গে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা এবং তা মনিটর করা কষ্টসাধ্য।’

চট্টগ্রাম ইপিজেডের শতভাগ কারখানায় ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই কারখানায় কারখানায় কাউন্সেলিং করেছি, সেটার সুফলও পেয়েছি। ইপিজেডের সব কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে। ১৭২টি কারখানার মধ্যে ১০০টির বেশি মে মাসের আংশিক কিংবা পুরো বেতনও পরিশোধ করেছে। কিছু কারখানায় শিপমেন্ট জটিলতা রয়েছে। এ কারণে তারা শেষ দিনে অর্থাৎ আগামী সোমবার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে কারখানা ছুটি দিয়ে দেবে।’

আপনার মতামত জানান