ঘুষ না দিলে কাজ করেন না সহকারী ভূমি কর্মকর্তা
বাগেরহাটের শরণখোলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বানিয়াখালী ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশীলদার) প্রভাষ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। তার এসব নৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং শাস্তি দাবি করে জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সকালে ওই ভূমি অফিসে গণশুনানি ও ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেছেন শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, সহকারী ভূমি কর্মকর্তা প্রভাষের কাছে কোনো ব্যক্তি জমির নামজারি (মিউটেশন), খাজনা প্রদান বা জমিজমাসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে গেলে প্রথমেই কাগজপত্র ভুয়া বলে তাকে বিভ্রান্ত করা হয়।
এরপর তার নিযুক্ত দালালের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার কাছে ঘুষ দাবি করা হয়। গ্রহীতা যদি ঘুষ দিতে রাজি না হন, তাহলে অপমান-অপদস্ত হতে হয় তাকে। এ ছাড়া নামজারির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও হাজার হাজার টাকা অতিরিক্ত দাবি করেন ওই তহশীলদার। এমনকি খাজনা প্রদানের ক্ষেত্রেও জমির পরিমাণের কয়েকগুণ বেশি নিয়ে থাকেন তিনি। সব কিছু সঠিক থাকার পরও এভাবে মাসের পর মাস ঘুরেও সেবাবঞ্চিত খোন্তাকাটা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তার শাস্তিসহ বদলি দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের শহিদুল ইসলাম হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আমি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুটি দলিলে ১৫ শতক জমির মিউটেশনের জন্য আবেদন করি। এর ১৫ দিন পর এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে তহশীলদার (সহকারী ভূমি কর্মকর্তা) প্রভাষ চন্দ্র দাস আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুর দাবি করেন। তার দাবীকৃত ঘুষ না দেওয়ায় পরবর্তী সময়ে আমার মামলাটি খারিজ করে দেন।
খোন্তাকাটা গ্রামের নূরুল আলম জানান, তার ১৯ শতক জমির খাজনা সরকারি নিয়মে আসে মাত্র ৩৮ টাকা। কিন্তু তার কাছ থেকে ৫৪০ টাকা নেওয়া হয়। তার পরও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুজ্জামান জমির মিউটেশন করতে গেলে তার কোনো কথা না শুনেই অফিস থেকে বের করে দেন। আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুন অর রশিদ জানান, তিনি দাখিলা কাটতে গেলে তার কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন তহশীলদার। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি সেবা না পেয়েই চলে যান।
পূর্ব খোন্তাকাটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. মহিউদ্দিন শাহজাহান বলেন, আমি ৫০ শতক জমির খাজনা দেওয়ার জন্য গেলে আমাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন তহশীলদার প্রভাষ চন্দ্র দাস। আমার জমির কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও আজকাল করে করে আমাকে এক মাস ঘোরানো হয়। এভাবে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ তহশীলদারের কাছে জিম্মি। তাকে ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। এই ঘুষখোর তহশীলদারের শাস্তিসহ বদলির দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী ভূমি কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র দাস তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট দাবি করে বলেন, আমার কাছ থেকে যারা অনৈতিক সুবিধা পাননি, তারাই অভিযোগগুলো করেছেন।
খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, তহশীল অফিসে গিয়ে ভূমিসংক্রান্ত সঠিক সেবা পাচ্ছে না মানুষ। এতে আমার ইউনিয়নবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ হয়রানি ছাড়া যাতে সেবা নিতে পারে, সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নূর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বানিয়াখালী ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত ও গণশুনানি করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তদন্ত ও গণশুনানির প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
আপনার মতামত জানান