গুজবে কান না দিয়ে, ফেনী নদী সম্পর্কে জানুন

প্রকাশিত

ফেনী নদী বাংলাদেশ ভারতের সীমানা ঘেষে প্রবাহিত হয়েছে। তাই এটা সীমানা নদী হিসেবে পরিচিত। নদীর এ পাড়ে বাংলাদেশ ও পাড়ে ভারত। নদীর মাঝামাঝি উভয় দেশের সীমারেখা। তাই নদীর পানি পূর্ব থেকেই দু’দেশের সীমান্তাঞ্চলের মানুষ ভোগ করে আসছে। ফেনী নদীর পানি বন্টন নিয়ে দেশে যা প্রচারিত হচ্ছে তা মূলত গুজব। যদিও আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী উভয় দেশের মধ্যে পানি বন্টন বাধ্যতামূলক। তাই ভারতের সাব্রুম অঞ্চলে পানি না থাকায় মানবিক কারনে পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তি না হলেও পানি যেতো ভারতে। কারন যেহেতু নদীর দুই তীরে দু’টি দেশ, সেহেতু উভয় দেশই এ নদী ও তার প্রবাহিত পানির দাবিদার। তবে মুল কথা হলো পুরো নদীটি বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে। কিন্তু নদীর অর্ধেক ভারতের বলে দাবী করছে তারা। নদী সম্পর্কে বিষদ বনর্না পড়লে আরো অনেক কিছু জানা যাবে।

ফেনী নদী

বাংলাদেশ সরকারের ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্য বলছে, ফেনী নদীটি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা এবং চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও প্রবাহিত হয়েছে।
বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, ত্রিপুরার পূর্বাঞ্চলীয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশে প্রবেশের পর নদীটি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও মিরসরাই এবং ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
প্রবাহ পথের অনেকটুকু জুড়েই নদীটি চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত হয়েছে।
নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ১১৬ কিমি।

এতে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে সীমানা চিহ্নিতকারী ফেনী নদী বাংলাদেশের অন্তর্গত। কিন্তু ১৯৬০ সাল থেকে ভারত সরকার নদীটির মধ্যভাগ পর্যন্ত নিজেদের দাবি করে আসছে।
নদীর দু’পাশে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং সমতলে ফেনী নদীর প্রবাহ পথের দুই পাড়ের মানুষদের জীবনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে ফেনী নদীর।

পার্বত্য এলাকা ও খাগড়াছড়ি থেকে বেশ কয়েকটি উপনদী এসে ফেনী নদীর উপর এসে পড়েছে। এরমধ্যে মুহুরি নদী উল্লেখযোগ্য।

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)’র সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, “এটি আসলে অনেকগুলো নদীর একটি অববাহিকা। যেটা ফেনী জেলাকে এবং উজানে খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ এর দ্বারা উপকৃত।”
“ফেনী নদীর পানি কমে গেলে এই উপনদীগুলোতেও পানি প্রবাহ কমে যাবে। যার কারণে ফেনী নদীর সাথে সাথে হুমকির মুখে পড়বে এসব নদীর জীব-বৈচিত্র্য এবং এর স্থানীয় বাসিন্দারাও।,”

পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ইনামুল হক বলেন, “ভারত যদি বেশি পরিমাণে পানি তুলে নেয় তাহলে মুহুরি সেচ প্রকল্প ও পরিবেশগত যে প্রকল্প আছে সেটার উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ”।
নদী বিষয়ক সংগঠন রিভাইরাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, “শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ভারত যদি ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নেয় তাহলে তা পরিবেশের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ ওই সময়ে ফেনী নদীতে এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ পানি থাকে।”

অর্থাৎ পানি তুলে নেয়ার পরও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকবে নদীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।
পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, এ পরিমাণ পানি তুলে নিলে আসলে তা পরিবেশ এবং আশপাশের বসতির উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।

“বাংলাদেশের ভাটিতে এই নদীর উপর মুহুরি সেচ প্রকল্প আছে। আমি মনে করি না এই প্রায় দুই কিউসেক পানি উত্তোলন করলে তা পরিবেশের উপর কোন ধরণের প্রভাব ফেলবে,”।

মি. নিশাত বলেন, দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দরকার। যাতে খাবার পানি, নৌ-চলাচল, সেচ এবং নদীর স্বাস্থ্য বিবেচনা করে প্রতিবেশের জন্য পানি, মাছের জন্য পানি যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে দুই দেশ আরো ৬টি নদীকে একটা যৌথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে চাইছে।

( লেখক-সম্পাদক ও প্রকাশক, ডেইলি সোনারগাঁ ডট কম, তথ্য-সংগ্রহীত)

আপনার মতামত জানান