গুচ্ছগ্রামের খবর কেউ রাখে না

প্রকাশিত


কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে শেষ সীমানায় অবস্থিত সৈয়দগাঁও গুচ্ছগ্রাম। যেন অন্ধকারময় এক অবহেলিত স্থানের নাম। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির সরকারের আমলে এই গুচ্ছগ্রাম স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে স্থাপিত হয় আদর্শগ্রাম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থাপিত হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প। অথচ এদের কোনো খবর কেউ রাখে না। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার কোনো কর্মকর্তাই খোঁজ নেয়নি নানা সমস্যায় জর্জরিত এখানকার বাসিন্দাদের।


সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার শেষ সীমানায় পাকুন্দিয়া-হোসেন্দী পাকা সড়কের পাশে সৈয়দগাঁও এলাকায় সরকারি খাস জমিতে টিন শেডের ১৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এ ঘরগুলোতে বসবাসের জন্য ১৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব পরিবারে বর্তমানে ৩৫-৪০ জন লোকের বসবাস। এসব ঘরগুলো নির্মাণের পর থেকে অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। বর্তমানে এসব ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। মরিচা পড়ে টিন ফুটো হয়ে গেছে। ঘরের চাল দেবে গেছে। বর্ষকালে ঘরের ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ে। কেউ কেউ সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ছাউনি দিয়ে কোনরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এ গুচ্ছগ্রামের ঘরগুলো এখন আর বসবাসের উপযোগী নয়। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে বিছানাপত্র ভিজে যায়। এ সময় ঘরের এককোণে বসে সময় পাড় করতে হয়। রয়েছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের সংকট। বিদ্যুতের ব্যবস্থাও নেই। তবে ৩০-৪জন বিদ্যুৎ পেয়েছে টাকা খরচ করে। এছাড়াও খাদ্য সহায়তার কোনো প্রকল্প নাই এ গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও পাচ্ছেন না প্রতিকার।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত মন্টু, মোবারক, কামাল, বিল্লাল, জরিনা, হুসনে আরা ও জুলেখাসহ সকলেই একই সুরে বলেন, ভোটাভোটির সময় আইলেই আমাগোর খবর লয়, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। ভোটাভোটির পর আর কেউ খবর লয় না। আমরা কেমনে আছি না আছি কেউ কোনো খবর নেয়নি। উপজেলা থেইকাও কেউ আইয়ে না।

তারা আরো বলেন, টেহার অভাবে আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেহাপড়া করাইতে পারছি না। এই গ্রামে একটা পানির কল নাই। ল্যাট্টিন নাই। কবরের জায়গা পর্যন্ত নাই। কেউ মারা গেলে হাতে-পায়ে ধরে পাশের বাড়ির গোরস্থানে নিয়ে কবর দিতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় কুপিবাতি জ্বালিয়ে রাতে কাজ করতে হয়। কেউ কেউ ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ নামিয়েছে। তারা আরো জানান, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে বিভিন্ন মানুষকে বিনামূল্যে পানির কল, গরু-ছাগল, রিকশাভ্যান ইত্যাদি দিলেও তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি।

এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র মো. আক্তারুজ্জামান খোকন বলেন, গুচ্ছগ্রামের দেখাশোনার দায়িত্ব আমার নয়। এদের দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অতি দ্রুত তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুত্র : কালের কন্ঠ

আপনার মতামত জানান