গজারিয়া ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান সাদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে ইউএনওর বিরুদ্ধে অফিসে বসে দলবলসহ শেয়ার ব্যবসায় ব্যস্ত থাকার অভিযোগও করা হয়। স্থানীয় ছয় ব্যক্তি স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি জমা দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগকারীরা হলেন গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু তালেব ভূঁইয়া, টেংগারচর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান জুয়েল, বাউশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রধান, ভবের চর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন, গুয়াগাছিয়ার কাওছার আহমেদ খান ও হোসেনদি ইউনিয়নের ডাক্তার তপন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইউএনও হাসান সাদী উপজেলার ঠিকাদারদের লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেই ঠিকাদারি কাজ করছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষর্থীদের শিক্ষাবৃত্তির চার লাখ টাকা তিনি যথাযথভাবে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলার আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহের নামে ১৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখালেও বাস্তবে খচর হয়েছে এক-চতুর্থাংশের কম। অভিযোগের কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান বিল প্রদানে আপত্তি দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

অর্থ আত্মসাৎ করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের খেলনা সরবরাহের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে শিশুদের ত্রুটিপূর্ণ স্লিপার অন্যতম। জোড়া দেওয়া এ স্লিপারে খেলতে গিয়ে পোশাক ছিঁড়ে গিয়ে চরবলাকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ নিয়ে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আকতার হোসেন লিখিত আকারে ইউএনওকে পত্র দিলে রোষানলের শিকার হন। বালুয়াকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ত্রুটিপূর্ণ স্লিপারটি ব্যবহার করতে পারছে না শিশুরা। একই অর্থবছরে উপজেলার পুরনো ভবন মেরামত বাবদ প্রায় ২৩ লাখ টাকার ঠিকাদারি কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ৩০ জুন আগাম টাকা উঠিয়ে পে-অর্ডার করে রাখা হয়। কিন্তু পরে কাজ করা হলেও যথাযথ হয়নি।

ইউএনওর বিরুদ্ধে উপজেলার হাট-বাজার ও ঘাট ইজারাপ্রক্রিয়ার বিপরীতে খাস কালেকশনের নামে টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। মেসার্স নেকী এন্টারপ্রাইজ ও ইতি এন্টারপ্রাইজের নামে উপজেলা পরিষদ ও এলজিইডির ৩৫টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ কাজে ২৫ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ইউএনওর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পানি হাজার হাজার একর নদী, খাল ও নিচু ভূমি দখল, কৃষিজমির উর্বরাংশের মাটি কাটা ও ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া জমি ড্রেজার দ্বারা কেটে নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি গত রবিবার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও উত্থাপন করেন গজারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম। কম্পানিগুলো ইউএনওকে এর জন্য নানাভাবে পুরস্কৃত করছে। কোনো কোনো কম্পানি বিনা মূল্যে প্লেসমেন্ট শেয়ার দিয়ে পুরস্কৃত করছে। ইউএনও কর্মস্থলে অনিয়মিত থাকেন এবং কার্যালয়ে এলেও শেয়ারবাজার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

এ ব্যাপারে গজারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম সুনির্দষ্ট কয়েকটি অভিযোগ তুলে জানান, উপজেলা পরিষদের সংস্কারকাজে পুকুর চুরি করেছেন ইউএনও। ২৫ লাখ টাকার কাজের বিল ভাউচার পর্যন্ত উপস্থাপন করছেন না। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহের নামে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ের বিষয়টিও সঠিক নয় বলে তিনি জানান।

তবে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও হাসান সাদী। তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলো অসত্য, ভুল। ভুলে ভরা এসব অভিযোগ। যারা অভিযোগ করেছে তারা প্রমাণ করুক। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেব। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।’

 

তথ্যসুত্র: কালের কন্ঠ

আপনার মতামত জানান