কেমন হবে বর্ষায় সাজ-পোশাক?

সময়টাই এমন, এই রোদ তো এই ঝুম বৃষ্টি। এমন দিনে কেমন করে সাজলে সাজ হবে ঠিকঠাক, আবার টিকেও যাবে বেশ খানিকটা সময়—সেই উপায় বাতলে দিলেন রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। লিখলেন জিনাত জোয়ার্দার রিপা
সাজের শুরু হয় পোশাক দিয়েই। তাই কী পোশাক পরবেন কোন জায়গায় যেতে, প্রথমেই নির্বাচন করে নিন সেটি। সাজ নির্ভর করবে মূলত সেই পোশাকের ধরন, রং ও অনুষ্ঠান কেমন তার ওপর। এরপর শুরু করে দিন সাজের কাজ
অনুষ্ঠানে জমকালো
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ যত স্বাভাবিক রাখা যায়, ততই ভালো। একটু উষ্ণ বেইস রং যেমন বাদামি, পিচ, ট্যান, ভ্যানিলা, বার্লিউড, স্টিমড চেস্টনাট রংগুলো দেখতে স্বাভাবিক লাগে। কথা হলো, রোদ-বর্ষায় মানুষ তো শুধু অফিসেই যায় না, সন্ধ্যায়-রাতে দাওয়াতও থাকে। সে ক্ষেত্রে মেকআপের বেইসটা হবে পানিরোধী। সঙ্গে অন্য অনুষঙ্গ থাকবে স্বাভাবিক। তবে লিপস্টিক, মাশকারা আর কাজলটা হবে পানিরোধী। এই মেকআপের শুরুটা প্রাইমার দিয়ে, আর শেষটা হবে সেটিং স্প্রে দিয়ে। নয়তো মেকআপ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। খেয়াল রাখবেন, হাতে আর গলায়ও যেন মিলিয়ে বেইসের শেড পড়ে।
অনুষ্ঠানে কিন্তু বাঙালির শাড়িই সেরা। আর বৃষ্টির এই সময় ম্যাটেরিয়াল যদি হয় মসলিন, তাহলে তো কথাই নেই। আর এখন ভীষণ ট্রেন্ডিও। শাড়িতে যেকোনো টোনের মেকআপই মানিয়ে যাবে। তবে শাড়ির রং হালকা হলে মেকআপ গাঢ়ই ভালো। মিলিয়ে আই শেড, মাশকারার গাঢ় প্রলেপ আর আই ব্রোর নিখুঁত টান, সাজ কিন্তু বারো আনা শেষ। রইল বাকি চার আনা। চুল ছেড়ে রাখতে পারেন। নিচে শুধু হালকা ব্লো কার্ল। ব্যস! সাজের মুনশিয়ানায় আপনিই যেখানে বিশেষ হলেন, সেখানে গয়না না হয় হালকাই থাক।
ত্বক ভালো রাখতে সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করা ও ময়েশ্চারাইজার করার কোনো বিকল্প নেই। মেকআপ বা প্রসাধনী যতই ভালো হোক, অপরিষ্কার ত্বকে কোনোটাই ভালো দেখাবে না।
দিনমান আড্ডায়
এখনকার ব্যস্ত সময়ে আড্ডার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নানা কাজের শিডিউল। সময়টা বৃষ্টির বলে পোশাকের রং ধূসর, আকাশি, ছাই বা হালকা যেকোনো কিছু আর ধরনে জর্জেট, শিফন, সিল্ক হলেই ভালো। মোটিফ ফ্লোরাল জনপ্রিয় এখন। পোশাকে সে চল বেছে নিতেই পারেন। এ ধরনের পোশাকে, কোথায় কী করতে যাচ্ছেন সেটি মেনে সাজলে, সাজ হবে মিনিমাল। কিন্তু আপনাকে দেখতে লাগবে মোহনীয়। মিনিমাল টোনে চোখের সাজ, লিপস্টিক, ব্লাশঅন সবই হবে মিনিমাল। চুলের বাঁধনে আলতো বেণি অর্থাৎ গোড়া হালকা রেখে আলতো হাতে বেণির বুনন। কানে মৌসুমি ফুল। হতে পারে তাজা বা নকল। ফুলের সে শোভা ছড়াতে পারে চুলেও। এবার দেখুন আয়নায় নিজেকে। লাগছে কি না মায়াকাড়া?
নীল নবঘনে
বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে জলকণা। যখন-তখন ঝরছে নিজের খেয়ালে। কিন্তু উপভোগ করার জো নেই। সকাল হতেই অফিসপানে ছুট লাগাতেই হয়। একে তো ভাপসা গরম, তার সঙ্গে বৃষ্টির পানি। বাড়ি থেকে মেকআপ করে বের হবেন, না গন্তব্যে গিয়ে করবেন সে ভাবনাই কাবু করছে আপনাকে। উপায় কিন্তু আছে। ওয়াটারপ্রুফ বা পানিরোধী মেকআপ। কাজ একটাই। ঘাম হোক বা বৃষ্টি, মেকআপ গলবে না।
মেকআপ হতে হয় ত্বকের ধরন বুঝে। বাজারে এখন ওয়াটারপ্রুফ বা পানিরোধী ফাউন্ডেশন, মাশকারা, কাজল, লিপস্টিক—সবই পাওয়া যায়। তবে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করতে হলে প্রথমেই নিজের ত্বকের ধরনটা বুঝতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রসাধনী বেছে নিতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা, তেলমুক্ত মেকআপ উপকরণ নিতে হবে। ত্বক শুষ্ক হলে ক্রিমি বা সাটিন ফিনিশের পানিরোধী বেইস মানানসই। তবে কারো ত্বকে অ্যালার্জি বা কোনো ধরনের সংক্রমণের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণ মেকআপের সঙ্গে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের একটি বড় পার্থক্য তৈরি হয় লোমকূপের কারণে। অন্য মেকআপে লোমকূপ বন্ধ হয় না, পানিরোধী মেকআপে লোমকূপ বন্ধ করা হয় যেন ঘামে মেকআপ না গলে। আমাদের বর্ষা মানেই ঘাম ও পানির যুগল যন্ত্রণা। তাই প্রচণ্ড গরমে বা তুমুল বৃষ্টিতে বাইরে যেতে এ ধরনের মেকআপই মানানসই।
বৃষ্টির সঙ্গে নীলের মেলবন্ধন চিরন্তন। কী করে শুরু কেউ না জানলেও এদের জুটি মন কাড়ে। তাই অফিস হোক বা মিটিং কিংবা বিজনেস প্রেজেন্টেশন- পোশাক নীল হলে বেশ লাগবে। এরপর মেকআপ। আগেই জেনেছি, পানিরোধী প্রসাধনই নিয়ামক। বেইস হালকা হলেই ভালো। এর পরই আসে চোখের ওপর নজর। এই সময়ে চোখের সাজ একটু গাঢ় হতেই পারে। চোখে পড়তে পারে দুই বা তিন রঙের শেডের আস্তর। তা হতে পারে পোশাকের রঙে মিলিয়ে কিংবা কন্ট্রাস্ট। তবে চোখের সাজে স্মোকি টোন সব পোশাকেই মানিয়ে যায়। ফলে ঝুঁকি এড়াতে এটা ব্যবহার করতে পারেন। কাজল আর আই ব্রোর টান কিন্তু গাঢ়ই মানাবে। গয়না বাহুল্যবর্জিতই ভালো। চুলের বাঁধনে মেসি বান বা এলোমেলো খোঁপা ভালোই লাগবে। তবে হ্যাঁ, লিপস্টিক কিন্তু হট টোন হওয়া চাই। হাজার হোক, পোশাকের রং যে নীল। আর সবচেয়ে বড় কথা, পোশাকের ম্যাটেরিয়াল কিন্তু সিল্ক, জর্জেট, শিফন, হাফ সিল্ক—এমন হলে ভালো। তাহলে বৃষ্টিতে ভিজলেও শুকিয়ে যাবে দ্রুত।
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।
আপনার মতামত জানান