কেউ আমারে ভাত দেয় না

প্রকাশিত

সোহেল রানা স্বপ্ন (রাজিবপুর কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা):
বাবা কেউ আমারে ভাত দেয় না বলছিলেন, ৬২ বছরের হাফিজা খাতুন। কাজ থাকলে খায়, না থাকলে না খেয়েও থাকে। পাট ধোয়ার কাজ করে সংসার চলে তার। এমন আরো অনেক হাফিজা খাতুনের সন্ধান পাওয়া যায়, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায়। তারা পুরুষের সঙ্গে তাল মিটিয়ে বুকসমান পানিতে পাটের আশ ছাড়ানো সহ অনেক কাজ করছেন।


কথা হয় ৩৭ বছর বয়সী রহিমা বেগমের সাথে। তিনি জানান, ২২ বছরে ২৩ বার তাঁর বাড়িঘর গ্রাস করেছে ব্রহ্মপুত্র। রহিমা বেগম জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের রহমান আলীর মেয়ে। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় ব্রহ্মপুত্রের পেটে যায় বসতভিটা। পরে অন্যের জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেন। বারবার নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত তাঁর পরিবার।


তেমনি গত বছর রহিমার বসতভিটা ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হলে দুই মেয়ে এক ছেলেকে সংঙ্গে করে ঠাই নেন মাধবপুর বিলপাড়া চরে অন্যের জমিতে। দিন মজুরি ও মাছ বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চলে। তাছাড়া বিবাহিত ছোট মেয়ের সংসার ভেঙ্গে গেছে। টাকার অভাবে একমাত্র ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার। রহিমা বলেন, ‘নদীভাঙায় আমগোরে সব শ্যাষ। খুব কষ্টে আছি।

ভাঙ্গনের কবলে চরসাজাই গ্রামের হাফিজা খাতুন অন্যের জমিতে, কাগজের ঘর তুলে জীবন জাপন করছে। তিনি বলেন, আগে আমার বড় বাড়ি ও জমি জমা আছিল। নদী ভাংতে ভাংতে আমার সব শ্যাষ”

নদীভাঙনের শিকার বিলপাড়ার রুহুল আমিন গত ৯ মাস ধরে অন্যের এক টুকরো জমিতে পলিথিন আর পাটখড়ির তৈরি জরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন।

চর সাজাই এলাকার আমিনুর মাষ্টার বলেন, এলাকার প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর। প্রতিবছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা বৃষ্টিতে ধরলা নদী ব্রহ্মপুত্র নদের ও সোনাভরি নদীতে আশঙ্কাজনক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে আগাম ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।

শংকর মাধবপুরের বিলপাড়া এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, চরের মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা বলতে তেমন কিছু নেই। কাগুজে একটি ক্লিনিক থাকলেও নিজস্ব কোনো ঘর নেই। চরের প্রসূতি এবং মানুষ অসুস্থ হলে তাঁদের বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়ে।

কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কুর ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম পুরোপুরি নদীতে বিলীন। গ্রামগুলো হলো- শংকর মাধবপুর, সাজাই, মধ্য সাজাই, পাইকাণ্ডারীপাড়া, উত্তর কোদালকাটি ও বিলপাড়া। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিতা কামনা করেন তিনি।

ইউএনও অমিত চক্রবর্তী বলেন, নদীভাঙা মানুষের সহায়তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে। তবে প্রকৃত অর্থে যারা ক্ষতিগ্রস্ত সহায়তা পাবার যোগ্য তাদের তালিকা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত জানান