কাঁদলেন, কাঁদালেন এসপি হারুন

পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বদলি হওয়া নারায়ণগঞ্জের বিতর্কিত পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ জেলা পুলিশের দেওয়া বিদায়ী সংবর্ধনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে অঝোরে কেঁদেছেন। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছেন বলে জানান সদ্য বিদায়ী হারুন অর রশীদ। বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হারুন বলেন, ‘সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছি। তবে তদন্তে এটি বের হবে।’

অনুষ্ঠানে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এসপি হারুন বলেন, ‘আমার কোনো সহকর্মীর দিকে কেউ পিস্তল তাক করবে, সেটা তো হতে পারে না। তাই ওই ব্যক্তি কত বড় সম্পদশালী বা শক্তিশালী সেটা আমি দেখিনি। কিন্তু বলা হয়েছে চাঁদা দাবি করেছি। মূল বিষয় হলো মামলা হয়েছে, পুলিশ রেইড দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার (শওকত আজিজের) ছেলেকে আনা হয়েছিল, মা স্বেচ্ছায় এসেছে। এগুলো আপনারা জানেন। তবুও বিদায়বেলায় আমি বললাম।’

উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর রাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারা রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে বাসা থেকে তুলে আনার অভিযোগ ওঠে এসপি হারুন ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিমের বিরুদ্ধে। শওকত আজিজ রাসেলকে ফাঁসানোর জন্য গাড়িতে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে নাটক সাজিয়ে দুই নম্বর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন এসপি মো. হারুন অর রশিদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ১ নভেম্বর রাত পৌনে ১টায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে শওকত আজিজ রাসেলের গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ চালক সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় গাড়িতে থাকা শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারা রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে। পরে দুপুরের দিকে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম ও বড় ছেলে আজিজ আল কায়সার টিটু এসপি অফিস থেকে ছেলের বউ ও নাতিকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। তবে শওকত আজিজ রাসেল ও ড্রাইভার সুমনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু বিপত্তি বাধে শওকত আজিজ রাসেলের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে। বিষয়টি খোলাসা হয় যে চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশন থেকে নয়, শওকত আজিজ রাসেলের বাসা থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরই মধ্যে দুই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তবে ছয় দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আছেন রাসেলের ড্রাইভার সুমন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কথায় নয়, মন থেকে যেটা চেয়েছি সেটাই করেছি। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

এর আগে গত ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার পদ থেকে মোহাম্মদ হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের টিআর শাখায় বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার নতুন এসপি মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বিদায় নেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জে থাকা অবস্থায় মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন জানিয়ে এসপি হারুন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। কিছু ভুল থাকতেই পারে আমাদের। এরপরও যারা ভুল করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন নিয়েছি। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের পক্ষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, এমপি-মন্ত্রী কেউ তদবির করেননি। এটা আমাদের ভালো লেগেছে।’ এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন হারুন। তার কান্না দেখে পুলিশের অন্য কর্মকর্তারাও আপ্লুত হয়ে পড়েন।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ব়্যাব-১১ এর সিইও কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নূরে আলম ও সুবাস সাহা।

সাজানো মামলায় জামিন পেয়ে শওকত আজিজ রাসেল জানান, চার কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন এসপি হারুন। চাঁদা না দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। চাঁদা না দেওয়ার কারণেই ঢাকা ক্লাবের সামনে থেকে তার গাড়ি গায়েব করে দেয় পুলিশ। তার একদিন পর গায়েব হন তার স্ত্রী ও সন্তান। তাকে ফাঁসানোর জন্য গাড়িতে বিপুল পরিমাণ মাদক ও গুলি রেখে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আর তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা।