করোনায় শিক্ষা খাতে ক্ষতি অপূরণীয়, ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্তরের ৪ কোটি শিক্ষার্থী

প্রকাশিত
করোনায় শিক্ষা পরিক্ষা

* বাস্তবতার নিরিখে চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্টভাবে ‘শিক্ষাউত্তরণ পরিকল্পনা’র তাগিদ

করোনা পরিস্থিতিতে সাড়ে ১৩ মাস ধরে বন্ধ আছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ছুটির কারণে স্থগিত আছে আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া। দীর্ঘ এই ছুটিতে শিক্ষার্থীরা এক প্রকার ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। একদিকে শিক্ষাক্রম-পাঠ্যসূচির শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের মনোসামাজিক ও শারীরিক বিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজিরার মাধ্যমে দৈনন্দিন সমস্যা-সম্ভাবনা ও ইতিবাচক দিকগুলো মোকাবিলা থেকে জীবনমুখী শিখনও থমকে আছে তাদের। সব মিলিয়ে সার্বিক শিক্ষায় অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্বিক শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পুরিপুরি পূরণ সম্ভব হবে না। তবে পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘাটতি সর্বোচ্চ পরিমাণে পূরণ সম্ভব হতে পারে। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি থেকে কবে উত্তরণ সম্ভব হবে-সেটাও অনিশ্চিত। এ কারণে বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষণ ও শিখন পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি তা এখনই বাস্তবায়নে যেতে হবে। এক্ষেত্রে পাঠ্যসূচির পরিবর্তে দক্ষতা অর্জনভিত্তিক ভাবনা অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এলাকাভেদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো চিন্তা করা যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ড. এম তারিক আহসান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও শিক্ষায় ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছে। তবে সংকট মোকাবিলায় যেটা পরে করা দরকার ছিল সেটা আগে করা হয়েছে, আর আগে যা করা দরকার সেই পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। যে কারণে চেষ্টা করা হলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। তবে সময় এখনো আছে। বাস্তবতার নিরিখে চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্টভাবে ‘শিক্ষা-উত্তরণ পরিকল্পনা’ করতে হবে। এজন্য কোভিড চলমান থাকলে কী করতে হবে আর স্কুল খুলে দিলে কী করা হবে-এমন দুটি উদ্ভাবনী পরিকল্পনা এখনই করা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে সিলেবাস ও পাঠ্যবই কতটুকু শেষ করা হলো, সেটার পরিবর্তে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষণ পদ্ধতি চিন্তা করা যেতে পারে। পাশাপাশি একটি ‘ব্রিজিং প্রোগ্রামের’ আওতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বন্ধে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা চিন্তা করতে হবে। ঘাটতি পূরণ না-করে সামনে এগোনো যাবে না। এ চিন্তা একদম বাদ দিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। পরে ২৯ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং ৭ এপ্রিল প্রাথমিক স্তরের পাঠদান সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে শুরু করা হয়। এ ছাড়া বেতার ও অনলাইন প্ল্যাটফরমে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা আছে। মাধ্যমিক স্তরে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে কিংবা শিক্ষকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগে মূল্যায়ন পর্বও অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন বেসরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এসব উদ্যোগ সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি।
শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) জাতীয় মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফরম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এটা ঠিক যে করোনায় শিক্ষার ক্ষতি অপরিমেয়। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বেরই। প্রত্যেক জাতিই নিজস্ব সুবিধা আর পদ্ধতি অনুযায়ী উত্তরণের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরাও করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে এটা ঠিক যে, এতদিন সমস্যা প্রলম্বিত হবে-তা ভাবনার বাইরে ছিল। আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ দিয়ে চলে আসছি। এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। তাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সর্বমোট চার কোটি শিক্ষার্থী আছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি অনুকূলে এলে আগামী ২৩ মে সরব হতে পারে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। আর উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৪ মে খুলে দেওয়ার ঘোষণা আছে।

প্রাথমিক স্তর : এই স্তরে গত বছর কোনো অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। গত বছরের (২০২০) প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেওয়া যায়নি মেধাবৃত্তি। অবশ্য এবারেরটি দেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত চিন্তা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে সংসদ টিভি এবং বেতারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে শিক্ষকদের বিভিন্ন গ্রুপ ফেসবুকের মেসেঞ্জারসহ অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে পাঠদানের চেষ্টা দেখা গেছে। চলতি বছর টেলিভিশন ও বেতারে পাঠদান অব্যাহত আছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ইন্টারনেটের ধীরগতি, পরিবারে টেলিভিশন-বেতার না-থাকাসহ নানান কারণে এই উদ্যোগের সুফল সবার কাছে পৌঁছায়নি। বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদ্যোগ একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। শুধু শহর পর্যায়ের কিছু বেসরকারি বিদ্যালয়ে কার্যক্রম কোনোরকমে অব্যাহত আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উল্লিখিত উদ্যোগগুলোর সুবিধা পেয়েছে বরাবরের মতোই শহরাঞ্চলের শিশুরা। আর সব সময়ের মতোই উল্লিখিত সব মাধ্যমেই উপেক্ষিত থেকেছে প্রত্যন্ত অঞ্চল।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি তথ্যানুযায়ীই টেলিভিশন আছে ৬৫ শতাংশ পরিবারে। আর ক্যাম্পের গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই অনলাইন বা দূরশিক্ষণের উদ্যোগ পৌঁছয়নি। যে ৩১ শতাংশের কাছে পৌঁছেছে তারা স্বাভাবিক পাঠদানের মতো করে নেয়নি এসব পাঠদান। সুতরাং, এসব উদ্যোগে যে শিখন ঘাটতি দূর হয়েছে-তা বলা যাবে না। বরং বড় ধরনের ঘাটতি আছে। এসব দূর করতে হলে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ক্ষতিপূরণে শিক্ষাবর্ষ জুন পর্যন্ত বাড়ানো ও স্কুলে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের শিক্ষার ওপর বাড়তি জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও এ স্তরে একইভাবে অবকাঠামোগত বাস্তবতায় অনলাইন ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের বাইরে আছে অনেক শিক্ষার্থী। ষষ্ঠ থেকে নবম পর্যন্ত কোনো শ্রেণিরই বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃতরা একদিনও বসতে পারেনি সরাসরি ক্লাসে। এখনো ঝুলে আছে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে এসএসসির যারা তারা নবম শ্রেণিতে সরাসরি ক্লাস করেছে। দশম শ্রেণিতে ক্লাস পেয়েছে মাত্র আড়াই মাস। তাদের প্রাক-নির্বাচনি ও নির্বাচনি কোনো পরীক্ষা হয়নি। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষে হয়েছে অটোপাশ। তারা এ শ্রেণির কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এ অবস্থায় ‘কাস্টমাইজড’ সিলেবাসের নামে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রও ইতোমধ্যে ছাপানোর কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে হয়নি ২০২০ সালের জেএসসি পরীক্ষা। এবারেরটিও বাতিলের পথে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতেই দক্ষতা অর্জনকেন্দ্রিক শিখন পদ্ধতিতে যেতে হবে। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিকল্প আছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমত, বাড়ি-সমাজভিত্তিক শিক্ষণ কার্যক্রমের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যতটুকু দক্ষতা আমি দিতে চাই ততটুকু তাকে এই প্রক্রিয়ায় পৌঁছাতে হবে। যা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মনিটরিং করতে হবে। এতে যে ইন্টারনেট বা টেলিভিশনের আওতায় থাকবে-না, তাকে বাড়িতে রেখেই শিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ প্রক্রিয়ায় প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জন করানো যাবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক বেশ শক্তিশালী। এর মাধ্যমে বাবা-মাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রাখা যেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে অনেক নির্দেশনা এবং ম্যাটেরিয়াল আমরা দিতে পারব। এতে টেলিভিশন-বেতারের চেয়ে বেশি উপকৃত হওয়া সম্ভব। তৃতীয় বিকল্প হিসাবে ইন্টারনেট, বেতার ও টেলিভিশনের আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। আমরা তৃতীয়টি ধরে এতদিন চলেছি। এখনো চলছি। যে কারণে আমরা টার্গেট গ্রুপের সবার কাছে পৌঁছাতে পারিনি।

উচ্চশিক্ষা : করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর গত বছর মে মাসে প্রথমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। পরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে কিছুদিন ক্লাস নিয়েছে। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। করোনা সংক্রমণ কমে এলে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ সেমিস্টার ও মাস্টার্সে বেশকিছু পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু অন্য সেমিস্টারে কিছু ক্লাস হলেও পরীক্ষা হয়নি। বন্ধ আছে উচ্চতর গবেষণা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, করোনায় উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড় ক্ষতি দুটি। একটি হচ্ছে, বহু কষ্টে নিয়ন্ত্রিত সেশন জট ফিরে এসেছে। অন্তত দুই বছর সেশনজটে পড়বে ছাত্রছাত্রীরা। দ্বিতীয়ত, গবেষণা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ব্যক্তিগত কিছু গবেষণা চললেও এমফিল-পিএইচডি এবং ল্যাবরেটরি-সমীক্ষা-ফিল্ডওয়ার্কভিত্তিক গবেষণা বন্ধ আছে। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ ছিল। এর মধ্যে একটি অনলাইনে ক্লাস। কিন্তু তা ঠিকমতো চলেনি। বিশেষ করে বেশকিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে আছে। বলা যায়, ইন্টারনেট গতি, ডিভাইস সমস্যাসহ নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে। বিশেষ করে পরীক্ষা না-হলে ক্লাস চলে কীভাবে? এ কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় সংকট মোকাবিলায় ডিজিটালইজ প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে হবে। অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার বুদ্ধি বের করতে হবে। এজন্য সবার আগে দরকার এ খাতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা আছে; কিন্তু বিদ্যমান অবস্থায় সুযোগ নেই। কারণ, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কথা ছিল। এখনো তা হয়নি। তিনি বলেন, আজ (বুধবার) ভিসিদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বৈঠক হয়েছে। এতে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পুনর্বিন্যাস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অন্যান্য শিখন দিক ও বিকাশ : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার চেয়েও বড় ক্ষতি হয়েছে মনোসামাজিক বিকাশে। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে খেলাধুলা করে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলে। সহপাঠীদের সঙ্গে মেশার ফলে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে। এ ছাড়া অনেকে বাসার বাইরে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। এসবই বন্ধ আছে।

রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হামিদা আলী বলেন, শিশুরা দৈনিক স্কুলে আসা-যাওয়া করে। এটা একটা মস্তবড় বিষয়। এ অভ্যাসটা নষ্ট হয়েছে-এটা বড় ক্ষতির একটা। প্রতিষ্ঠানের কাজ শুধু লেখাপড়া করানো নয়। এখানে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেশার ফলে তার সামাজিক বিকাশ হয়। খেলাধুলা করার কারণে শারীরচর্চা হয়। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানসিক বিকাশ লাভ করে। সমাজে মেশার ফলে সে নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে শেখে। এটাও তার শিখনের অংশ। না-আসার কারণে ও লেখাপড়ার বাইরে থাকায় তার এই যে নানা ক্ষতি হলো, সেটা তারা পায়নি। আবার অনলাইনে বা টেলিভিশনে যে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা হলো, সেটাও ততটা কার্যকর হয়নি। তাই যা গেছে, সেটা পূরণের যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। গ্যাপ যা তৈরি হয়েছে তা সব পূরণ সম্ভব নয়। যতটুকু পূরণ করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। এজন্য আলাদা সময় দিয়ে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। এ পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি থাকা জরুরি। কেননা, তাদের বাদ দিয়ে ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না। তাই তাদের কথা শুনতে হবে।

সূত্রঃ যুগান্তর

আপনার মতামত জানান