এসপি হারুনের অবৈধ গুলি, মাদক ও মদের উৎস কোথায়?
এসপি হারুন শওকত আজিজ রাসেলকে ফাঁসাতে যে ২৮ রাউন্ড গুলি, ১২শ পিছ ইয়াবা, ২৪ পিছ বিদেশী ব্রান্ডের মদের বোতল, ৪৮ ক্যান বিয়ার ও নগদ ২২ হাজার ৩শ’ টাকা জব্দ দেখিয়ে ২ নভেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন করেন। পরে শওকত আজিজের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ প্রমান করে গল্পটি এসপির নিজের লেখা। ৩ নভেম্বর তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এসপি নিকট এত বিপুল পরিমান অবৈধগুলি, মাদক ও মদের বোতলের উৎস জানতে চেয়ে সুষ্ঠ তদন্তের দাবী জানিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ২ নভেম্বর (শনিবার) নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, আগের দিন শুক্রবার (১ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় চৌরঙ্গি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। এর আগে গাড়িটি তল্লাশি করে একটি প্যাকেটে থাকা ২৮ রাউন্ড গুলি, ১২শ’ পিস ইয়াবা, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার ও নগদ ২২ হাজার ৩শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। তখন গাড়িতে শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও তার ছেলে আনাব আজিজ ছিলেন। রাতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরবর্তীতে স্ত্রী ও সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া হলেও শওকত আজিজ রাসেল ও তার গাড়িচালক সুমনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়েছে। পলাতক শওকত আজিজ রাসেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
এ গল্প অ্যাকশন মুভির গল্পকেও হার মানিয়েছে বলে জানা যায়। পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে ও আম্বার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল জানান, তার ব্যবহৃত গাড়িটি চালকসহ ঢাকা ক্লাব থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ৩১ অক্টোবর রাতে। পরদিন ১ নভেম্বর মধ্যরাতে গুলশানের বাসা থেকে রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল (৪০) ও তার ছেলে আনাব আজিজকে (১৭) বাসা থেকে তুলে নেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। পৃথক জায়গা থেকে গাড়ি, এর চালক ও রাসেলের পরিবারের সদস্যদের পুলিশ নিয়ে গেলেও ২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের তদানীন্তন এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, পুলিশ গাড়িটি আটকের পর এর ভেতর থেকে মাদক ও গুলি উদ্ধার করেছে। তার গল্পের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় শওকত আজিজ রাসেলের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ। তাতেই বিতর্কিত হয়ে পড়েন পুলিশের এই কর্মকর্তা। এরপর ৩ নভেম্বরই নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে এসপি হারুনকে ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরের টিআর শাখায় বদলি করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অগ্রভাগে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের সৎ ও সাহসীকতা সারা বিশ্বে সুনাম অর্জন করলেও দেশের অভ্যন্তরে গুটি কয়েক দূর্নীতিবাজ পুলিশের অপকর্মের কারনে দেশের মানুষ তাদের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়েছেন বলে জানান অপরাধ বিশ্লেষকরা। পুলিশের এ অপবাদ ঘুচিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাদের অবৈধ সম্পদের হিসাবের আগে তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদকের প্রকৃত উৎস খুজে বের করার দাবী জানিয়েছেন দেশের ৯৯ শতাংশ জনগন।
দেশের মানুষ জানতে চায়, পুলিশের কাছে কেন এত অবৈধ গুলি, এত বিশাল পরিমান ইয়াবা এবং বিদেশী মদের বোতল কোথা থেকে এলো? এসব অবৈধ জিনিসের প্রধান যোগানদাতা কারা এবং প্রধান উৎস কোথায়? তারা জানান, এ উৎস খুজে পেলেই নিমূল হবে সব ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম। এসব অবৈধ অস্ত্রই দূর্নীতিবাজ পুলিশকে কোটি কোটি অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে দিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে যারা আইনের রক্ষক তারা হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও নারী নিযাতনের মতো জগন্য অপরাধ করলেও তাদের শাস্তি কেন সাময়িক বরখাস্ত, কারন দর্শানো ও বদলী। তাদের শাস্তি কেন অন্যান্য অপরাধীর মতো হবে না প্রশ্ন রিক্সাচালক ফজুল মিয়ার।
আপনার মতামত জানান