এই সময়ের ডেঙ্গু

প্রকাশিত

বিশ্বে প্রতিবছর ১০০-৪০০ মিলিয়ন মানুষ মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এতে মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে এখন ডেঙ্গুর উপদ্রব ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো দেখা দিয়েছে।

এডিস ইজিপ্টি বা অ্যালবোপিকটাস জাতীয় স্ত্রী মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মানবদেহে। ভয়ানক ব্যাপার হলো, এই দুই মশা চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো জ্বর ও জিকা ভাইরাসের জন্যও দায়ী। শহর বা শহরতলি এই ভাইরাসের বংশবিস্তারের নিরাপদ নিবাস। এ কারণেই ডেঙ্গু নগরজীবনের অন্যতম প্রধান সংক্রামক ব্যাধি।

উপসর্গ
ডেঙ্গু হলে অনেক সময় তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। অনেক সময় সাধারণ ফ্লুর মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে এ রোগের পরিচিত উপসর্গ হলো : জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, শারীরিক দুর্বলতা, বমি, চামড়ার নিচে ছোপ ছোপ দাগ, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এই রোগে রক্তের অণুচক্রিকা হু হু করে কমে যেতে পারে। সাধারণত জ্বর চলে যাওয়ার পর এমনটি হয়। তখন শুরু হতে পারে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ। রক্তচাপ কমে নেতিয়ে পড়তে পারে রোগী। ক্ষেত্রবিশেষে অনেক অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

পরীক্ষা
এ মৌসুমে জ্বর ও আনুষঙ্গিক লক্ষণ দেখা দিলে তা ডেঙ্গুর আক্রমণ কি না তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। সাধারণত পাঁচ দিনের আগে এনএস-১ নামের পরীক্ষায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। পাঁচ দিনের পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে হয়। তবে রক্ত পরীক্ষায় নজর দিতে হয় অণুচক্রিকার (প্লাটিলেট) দিকে।

ডেঙ্গুর ভয়ানক কিছু উপসর্গ
♦ প্রচণ্ড পেট ব্যথা

♦ অবিরাম বমি; সঙ্গে রক্তক্ষরণ

♦ শ্বাসকষ্ট

♦ মাড়ি বা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ

♦ প্রচণ্ড দুর্বলতা

♦ অস্থিরতা বা ছটফটানি

♦ দ্রুত রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকা এবং হেমাটোক্রিট বাড়তে থাকা

♦ লিভারের এনজাইম অনেক গুণ বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।

ডেঙ্গুর এসব ভয়ানক লক্ষণ সাধারণত প্রকাশ পায় আক্রমণের তিন-সাত দিন পর থেকে। তখন জ্বর থেমে যায়। এ সময় রক্তনালি থেকে রক্তরস বের হয়ে আসে। ফুসফুসে বা পেটে পানি জমতে পারে। উপরোক্ত উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে এমনকি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) দ্বারস্থ হতে হবে।

চিকিৎসা
ডেঙ্গুর কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে ওপরের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেলে যথাসম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রেখে সহায়ক চিকিৎসা দিতে হবে।

আছে ভ্যাকসিন; তবে সবার জন্য নয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে; কিন্তু তা সবার জন্য নয়। ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। এর যেকোনো একটিতে কেউ একবার আক্রান্ত হলে তিনিই শুধু ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। অর্থাৎ যারা ডেঙ্গুর কোনো একটি প্রজাতি দ্বারা এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়নি তাদের এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে ভয়ানক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আর যারা ভ্যাকসিন নেবে তারা বাকি তিনটি ধরন থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। ডেঙ্গুতে একবার আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তাতে বেশি জটিলতা তৈরি হয়।

প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধের একটাই উপায়, আর তা হলো এডিস মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকা। আর এ জন্য মশক নিধন করে বা মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করে মশকমুক্ত আবাসস্থল নিশ্চিত করতে হবে।

– লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন ও হরমোন বিশেষজ্ঞ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকা

সূত্রঃ কালেকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান