ইসলামের ভবিষ্যৎ পশ্চিমা বিশ্বে
ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে দ্রুত বিকাশমান ধর্মগুলোর অন্যতম ইসলাম। ২০১৫ সালে প্রকাশিত বৈশ্বিক ধর্মগুলোর ভবিষ্যৎ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে পিউ রিসার্চ সেন্টার জানায়, আগামী চার দশক পর্যন্ত খ্রিস্টানরা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে থাকলেও ইসলাম অন্য ধর্মগুলোর চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এমনকি বর্তমানের মতো এর অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সংখ্যায় মুসলিমরা খ্রিস্টানদের প্রায় সমান হয়ে যাবে। তা ছাড়া গত ২৯ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় জানিয়েছে, এক দশকে মুসলিমদের জনসংখ্যা ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।
বর্তমানে দেশটিতে ৩.৮৭ মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করছে, যা মোট জনসংখ্যার ৬.৫ শতাংশ।
মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অভিবাসী, শরণার্থী ও আশ্রয় প্রকল্পের মাধ্যমে এই মহাদেশে বাড়তে শুরু করে মুসলমানদের সংখ্যা। পাশাপাশি ইসলাম গ্রহণের হারও বেড়েছে বহুগুণ। ইসলামকে ইউরোপ ও আমেরিকার দ্বিতীয় বা তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম বলে মনে করা হয়। ইসলাম ও মুসলিম জনগোষ্ঠী পশ্চিমা বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তাই অনেকে মনে করেন ইসলাম গ্রহণের হার আরো বৃদ্ধি পাবে এবং একদিন সেখানে নতুন সূর্য উদিত হবে। তবে অনেকের মতে পশ্চিমা বিশ্বে বহু ক্ষেত্রেই ইসলাম প্রচারে নানা বাধা-বিপত্তি আছে। যা অতিক্রম করাও অনেক কঠিন।
এ বিষয়ে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল আল-ফারুকি বলেন, আমেরিকানদের ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইসলামের সবচেয়ে বড় বিজয় হবে। তবে তা কি আদৌ সম্ভব? বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণায় ডুবে থাকা আমেরিকার জন্য কি তা সম্ভব? হ্যাঁ, তা সম্ভব। কারণ আমরা পশ্চিমা বিশ্বের অসংখ্য মানুষকে প্রতিদিন ইসলাম গ্রহণ করতে দেখছি। তাই হয়তো একসময় আমেরিকা মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হবে। পুঁজিবাদী অর্থ ও সমাজব্যবস্থার ব্যর্থতা হয়তো তাদের সেই পথে নিয়ে যাবে। নিরাপদ জীবনের বিকল্প হিসেবে তারা হয়তো এই পথ গ্রহণ করবে।
জার্মান কূটনীতিক ড. মুরাদ উইলফ্রেড হফম্যান (Murad Wilfried Hofmann) ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর বিখ্যাত বই ‘ইসলাম : দ্য অল্টারনেটিভ’ লেখেন। তিনি তাতে ইসলামের পুনর্জাগরণে আশা ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি একবিংশ শতাব্দীর ইসলামী জাগরণ ইউরোপ থেকে শুরু হবে। ’
১৯৮২ সালে বিশ্বখ্যাত ফরাসি দার্শনিক ও কমিউনিস্ট লেখক রজার গ্যারাউডির (Roger Garaudz) ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মতো একজন চিন্তাশীল লেখকের মুসলিম হওয়ার ঘটনাটি পুরো ইউরোপের জন্য বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
অবশ্য ইউরোপে ইসলামের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কথা জানিয়েছেন দ্য ইসলামিক সৌদি অ্যাকাডেমি অব ওয়াশিংটনের (আইএসএ) অধ্যাপক ড. কামাল আবদুল হামিদ আল-নামির। তিনি বলেছেন, ‘যারা আমেরিকা থেকে ইসলামের সূর্য উদিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা ভুল করছেন। কেননা আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতার অনুশীলন এবং নিজ দেশে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি একদিন তাদের বিভ্রান্ত করবে। আমেরিকায় ইসলামের সূর্য উদিত হওয়ার বিষয়টি কেবল দিবা স্বপ্নের মতো। তা ছাড়া বস্তুবাদী বিশ্বাসে গড়ে ওঠা আত্মকেন্দ্রিক সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব প্রায়। ’
পশ্চিমা বিশ্ব আগে যেমন ছিল ঠিক তেমনি আগামীতেও নিজ বৈশিষ্ট্য ধরে রাখবে। তাই এসব সমাজে নৈতিক অধঃপতন, আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস ও নবী-রাসুলদের আস্থাহীনতার ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমাদের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনাই তাদের ইসলাম থেকে দূরে রেখেছে। জার্মান কূটনীতিক মুরাদ হফম্যান লিখেছেন, ‘পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাব ও ইসলাম সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণাই ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে থাকবে। ’
পরিস্থিতি যেমনই হোক, ইউরোপীয় দেশগুলোতে ইসলাম গ্রহণের ক্রমবর্ধমান হার সবার মধ্যে আশা জাগায়। আল্লাহর ইচ্ছায় এসব দেশে ইসলামের জাগরণ অসম্ভব নয়। কেননা ইউরোপীয় নওমুসলিমদের ঈমানি চেতনা ও নবস্পৃহা নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। জীবনযাপনের অত্যন্ত সাধারণ বিষয়েও তারা মহানবী (সা.)-এর সুন্নতকে খুঁজে খুঁজে অনুকরণের চেষ্টা করে। অনেক সময় ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে তারাই অনেক বেশি এগিয়ে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে। আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, তিনি তওবা কবুল করেন। ’ (সুরা নাসর, আয়াত : ১-৩)
অবশ্য ইউরোপে মুসলমানদের বসবাস পরিপূর্ণ নিরাপদ ও শংকামুক্ত নয়। কেননা তারা সব সময় নানা ধরনের সমস্যা ও সংকটের ভেতর দিয়েই দিন পার করছে। এ ক্ষেত্রে তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দ্বিন পালন করে যেতে হবে এবং অন্যের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিতাবিদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বিপুল সম্পদ আমানত রাখলেও ফেরত দেবে; আবার এমন লোকও আছে যার কাছে একটি দিনারও আমানত রাখলে তার পেছনে লেগে না থাকলে সে ফেরত দেবে না। এটা এ কারণে যে তারা বলে, নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর তারা জেনে-শুনে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৫)
তাই ইউরোপে ইসলামী সূর্যের উদয়ন অস্বাভাবিক নয়। নতুন প্রজন্মসহ সবার ইসলামী জীবনাচার ও অবিচলতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা আমাদের কর্তব্য।
তথ্যসূত্র : ইসলাম ওয়েব ডটকম
ও আলুকাহ ডটকম
আপনার মতামত জানান