অসহায় মানুষের পাশে ইউএনও আতিকুল

প্রকাশিত



গরিব, অসহায়, নিপীড়িত, নির্যাতিত ও কর্মহীন মানুষের জন্য আন্তরিকতা ও ভালোবাসা নিয়ে কাজ করে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম সবার ভরসার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, শিক্ষার্থীসহ অসহায় মানুষের বিপদের বন্ধু তিনি। দক্ষতা ও সুনামের সাথে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তার নেশা। খবরের কাগজ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অসহায় মানুষের খবর আসলে সহায়তা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন তাদের বাড়ি। শিশুদের জন্যও বিতরণ করছেন শিশুখাদ্য।



করোনাকালীন সময়ে প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং নিজের অর্থে অনেকের পাশে থেকে হয়েছেন তাদের পরিবারেই একজন।

ইউএনও আতিকুল ইসলাম দেশের করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই নিজের জীবনের পরোয়া না করে সাধারণ মানুষের কল্যাণে সর্বোত্র মাঠে থেকে কাজ করছেন। করোনার শুরু থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লকডাউন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ত্রাণ হতদরিদ্রদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াসহ মাস্ক না পরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, নির্দিষ্ট সময়ের পর দোকানপাট বন্ধ রাখতে ছুটছেন দিনরাত। বর্তমান কঠোর লকডাউনে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য কাজ করছেন। ঘরবন্দি মানুষকে বাঁচাতে ত্রাণ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। গড়েছেন বিশাল স্বেচ্ছাসেবী টিম। ৩৩৩-তে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ। এ ছাড়া প্রতিদিন উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে কয়েকশত অসহায় পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দিচ্ছেন।



প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে নিয়মিত অফিসের কাজ সেরে মধ্য রাতেও ছুটে চলছেন জনগণের দরজায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলা চত্ত্বরে দেখা যায় অসহায় মানুষ খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

রিকসাচালক রফিক জানান, কঠোর লকডাউনে ভয়ে ভয়ে রিকসা নিয়ে বের হয়েছিলাম সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার আশায়। কিন্তু বের হয়েই মোবাইল কোটের সামনে পড়ে যাই। পরে ইউএনও স্যার আমার দুঃখের কথা শুনে শাস্তির বদলে খাবারের পোটলা দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিদিন একাধিক নির্যাতিত মানুষ আসছেন ইউএনও কাছে সঠিক বিচারের আশায়। ন্যায় বিচার পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন তারা। মধ্যবয়স্ক রাহেলা আক্তার জানান, তার প্রতিবেশী সামান্য ব্যাপার নিয়ে তাকে মেরে জখম করার বিচার নিয়ে আসেন। ইউএনও স্যার সাথে সাথে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসেন।

পৌরসভার বাড়িগর্ন্ধব এলাকার ১৯ বছরের আমেনা আক্তার জানান, ১ বছর আগে মাদকাসক্ত মোরসালিন তাকে জোড় করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর বন্ধুদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক এবং পর্নোগ্রাফির জন্য শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। কোথাও সুবিচার না পেয়ে ইউএনও’র কার্যালয়ে হাজির হন। তার সব কথাশুনে মাদকাসক্ত মোরসালিনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসেন।



ইউএনও আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি ইউএনও হিসেবে নয় অসহায় প্রতিটি পরিবারের একজন সদস্য হয়ে বাঁচতে চাই। ছাত্রজীবন থেকে মানুষের কষ্ট দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। চাকরি সূত্রে আমি দেশের বিভিন্ন এলাকায় যতটুকু পেরেছি নিজ থেকেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি ‘মানুষ’, এটাই আমার সবচেয়ে বড় বিশেষণ। আমি ইউএনও নয় আমি মানুষ হতে চেয়েছি। কতটুকু সফল হতে পেরেছি জানি না। প্রতিদিন যদি আমি একটি মানুষেরও সামান্য উপকারে আসতে পারি এটাই আমার স্বার্থকতা। আমি জানি পৃথিবীতে মানুষের জন্য মানুষ হওয়া সবচেয়ে কঠিন। আমি সবার আগে একজন মানুষ, তারপর ইউএনও আতিকুল ইসলাম।

সুত্র: কালের কন্ঠ

আপনার মতামত জানান