অশান্ত হতে পারে নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর হামলার ২২ মাস পর মামলা দায়ের নিয়ে ফের অশান্ত হওয়ার আশংকা করছে নারায়ণগঞ্জের সাধারন মানুষ। আদালতের নির্দেশ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি নথিভুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। শুক্রবার আইভীর মামলা নিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জে চলে আলোচনা। লোক মুখে কিংবা চায়ের আড্ডায় চলে এ মামলা নিয়ে নানা রকম বিশ্লেষন।

মামলায় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ৯ অনুসারীদের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১ হাজার জনকে আসামী করা হয়। মামলায় শামীম ওসমানের অনুসারীদের আসামী করায় নতুন করে নারায়ণগঞ্জ অস্থির হওয়ার আশংকা করেছে অনেকে। হকার উচ্ছেন নিয়ে ঘটনা ঘটলেও মামলায় কোন হকার নেতাকে আসামী করা হয়নি। বরং মামলার এজহারে ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নাম উল্লেখ করা হয়।

সংসদ সদস্য শামীম ওসমান জানান, দেশে আইনের শাসন নেই দাবি করে বিএনপি-জামাত যখন যড়যন্ত্র করে, কিন্তু জনগণ খায় না। তখন উনি সরকারি দলের একজন মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হলেও সরকারকে বিরোধী করে মামলা করলো। কোন সরকারকে? যার টিকিট পেয়ে আজ উনি একজন মেয়র হয়েছেন, যে দলের নেতাকর্মীরা তাকে নির্বাচিত করেছে। তাদেরে বিরুদ্ধে মামলা করলেন। কেন? কারণ এ কাগজ বিদেশে যাবে। গিয়ে দেখিয়ে বলতে পারবেন? খালেদা জিয়ার বিচার কি হবে? ওই দেশেতো সরকারি দলের একজন মেয়রকে বিচারের আশায় ২২ মাস ঘুরে বেড়ানোর পর কোর্টে যেতে হয়।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরে ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়মামলাটি রেকর্ড হয়। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, আদালতে নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা, জখম, নাশকতা, ভাঙচুর সহ অরাজকতার অভিযোগ আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আইন বিষয়ক কর্মকর্তা জিএম এ সাত্তারকে মামলা বাদী করা হয়।

মামলায় আসামী করা হয়, যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারী মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, আওয়ামীলীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদ।

নারায়ণগঞ্জে হকার উচ্ছেদ নিয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনার প্রায় সরকারের ৩ মন্ত্রনালয়সহ ৭ জনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে রীট দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার,জেলা প্রশাসক ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে বিবাদী করা হয়।
বিচারপতি এম এনায়তুর রহমান ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ ঐ রীট আবেদেনের প্রেক্ষিতে গত ১১ নভেম্বর দেয়া এক রুল নিশিতে সকল বিবাদীদের কারণ দর্শানোর (শো-কজ)পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর অভিযোগ আমলে নিতে নারায়ণগঞ্জ প্রধান বিচারিক হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৪ ডিসেম্বর বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা খাতুনের আদালতে একটি মামলার আবেদন করলে আদালত সেটি গ্রহন করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী বিকেল ৪টায় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও অন্যদের সাথে নিয়ে পদযাত্রা শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় পদযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে আসলে বিবাদীরা অত্যাধুনিক পিস্তল, রিভলবার, শর্টগান ও দেশী অস্ত্র নিয়ে চারদিক থেকে হামলা করে। বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। মেয়র সহ সঙ্গে থাকা লোকজনদের হত্যার উদ্দেশ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হামলায় আইভী সহ ৪৩ জন গুরুতর ও শতাধিক আহত হয়। বিবাদীরা সকলেই এমপি শামীম ওসমানের ইন্ধনে ও প্ররোচনায় উক্ত ঘটনা ঘটায়। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ফুটপাতে হকার বসানোর কথা বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণেই বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবেই মেয়র আইভীর শান্তির মিছিলে ভয়াবহ হামলা করে।

আদালতে মামলার আবেদনে বলা হয়েছিল, ঘটনার চারদিন পর ২২ জানুয়ারী সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সহ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ এজাহার গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে রুজু করে। পরে জানা যায় মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

কোন প্রকার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তখন পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সদর মডেল থানা পুলিশও তখন কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।

তবে আওয়ামীলীগের একটি সূত্র জানায়, মেয়র আইভী নিজেই তার সমর্থকদের নিয়ে ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ শুরু করলে হকারদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঐ সময় যুবলীগ নেতা ব্যবসায়ী নিয়াজুল ইসলামকে একা পেয়ে আইভী সমর্থকরা বেদম মারধর করে তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র ছিনিয়ে নিলে তাকে উদ্ধার করতে আসা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেনকেও মারধর করে আইভীপন্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পরলে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসলে ত্রিমুখি সংঘর্ষে পুরো বঙ্গবন্ধু সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পরিস্থিত শান্ত করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশে এমপি শামীম ওসমান নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল জানান, ২২মাস পরে মামলা দায়েরের ঘটনা এবং সেই মামলায় আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাদের আসামী করাটাই প্রমাণ করে মেয়র আইভী আগেও দলের ছিলেন না এখনও নেই। তার কাধে এখনও বিএনপি-জামায়াতের ভুত বসে আছে। তার এসব কর্মকান্ড দলের জন্য সুখকর কোন বার্তা বয়ে আনবে না।

মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বলেন, গায়ে পরে ঝগড়া লাগাতেই এই মামলা। যাদের আসামী করা হয়েছে তারা সকলেই দলের পরীক্ষিত ।

মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল বলেন, হকার ইস্যুতে করা মামলার ৯ জনের মধ্যে ৮ জন সেই ঘটনায় উপস্থিত ছিলনা। আপনারা সেদিনের ভিডিও ফুটেজ দেখলেই বুঝতে পারবেন। সেদিন একজনকে ছিল নিয়াজুল যে নিজেই মারধরের শিকার হয়েছে। তাই এরুপ মামলার ক্ষেত্রে খারাপ লাগে আওয়ামীলীগের যারা মেয়র আইভী নির্বাচনে কাজ করে তাকে নির্বাচিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এরুপ মিথ্যা মামলা দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার জন্য করা হয়েছে। তাছাড়া সেদিন মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েলকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে।

আপনার মতামত জানান