অরক্ষিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক!
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকার অটোরিকশা ও অনুমোদনহীন যানবাহন চালকদের দখলে চলে গেছে। মহাসড়কে এসব পরিবহন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও হাইওয়ে পুলিশের সামনেই বীরদর্পে চলছে এসব যানবাহন। এসব যানবাহনের কারণে মহাসড়কে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
জানা যায়, গত ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দেশের ২২ মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, অটো টেম্পো, নসিমন-করিমনসহ সবধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে।
তিন চাকার এসব যানবাহনকে মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে উচ্চ আদালত ও এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
উচ্চ আদালত ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশের পর কিছু দিন হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশ এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও গত কয়েক মাস ধরে তাদের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এসব যানবাহনের কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এসব যানবাহনের কারণে ধীরগতিতে ভারি যানবাহন চলাচল করার কারণে প্রতিদিন কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক দিন পরপরই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
এ ছাড়া কাঁচপুর থেকে মেঘনাঘাট পর্যন্ত অন্তত ৬টি স্থানে মহাসকের উপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিকশা, অটো টেম্পো ও ট্রাক-পিকআপ স্ট্যান্ড। তাছাড়া কাঁচপুর হাইওয়ে থানার সামনেই উড়াল সেতুর ঢালুতে বাস, ট্রাক, লেগুনা ও সিএনজি থামিয়ে চালকরা যাত্রী উঠানামা করালে পুলিশ তাদের কোন রকম বাধা দেয় না।
আজ শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টায় উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিএনজি স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের গাড়ি। পাশের দোকানে সিএনজি চালকদের সাথে চা-চক্রে মজেছে হাইওয়ে পুলিশের কয়েকজন।
এ ব্যাপারে একজন সিএনজি চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে মাসোয়ারার ভিত্তিতে (মাসিক চাঁদা) মহাসড়কে সিএনজি চলছে। তাই পুলিশ দেখলে আগের মতো দৌড়ে পালাতে হয় না। এ সময় কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়ক দিয়ে অসংখ্য পায়ে চালিত ও ব্যাটারি চালিত রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমন-বটবটিসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করছে। মহাসড়কে হাইওয়ে ও থানা পুলিশের একাধিক গাড়ি চলাচল করে দায়িত্ব পালন করলেও কেউ এসব যানবাহনকে বাধা দিচ্ছে না। এ ছাড়া এসব যানবাহন কোনো কোনো স্থান দিয়ে উল্টোপথে চলাচল করার কারনে বাড়ছে যানজট ঘটছে দুর্ঘটনা।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের চালক মামুন জানান, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে সিএনজি, অটোরিক্রা ও মিশুক চলাচলের কারণে ধীরগতিতে আমাদের চলতে হয়। শুধু তাই নয় মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত এসব গাড়ি উল্টোপথে চলার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। প্রতিদিন যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
সোনারগাঁ থানা পুলিশ ও কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত শুধু গত ছয় মাসে ৭০টি ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে ২০ জন মানুষ। এদের মধ্যে গত মাসে এশটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
জেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক নুর নবী জানান, চৌরাস্তা থেকে মেঘনা পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশের বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে এসব যানবাহনে চলতে হয়। মহাসড়কের পাশে এসব যানবাহন চলাচলের জন্য বাইলেন চেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও সারা পাইনি।
নাগেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবু হানিফ জানান, মহাসড়কে ছোট ছোট এসব যানবাহনের কারণে আমরা সব সময় সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকি। অভিযোগ করে তিনি বলেন, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা করেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে আদালত ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কার্যকর করছে না প্রশাসন।
আলমাস মিয়া নামের একজন অটোরিকশা চালক জানান, মাঝেমধ্যে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়, পরে আমাদের সমিতির নেতারা পুলিশকে ম্যানেজ করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যে চুরি করে কিছু অটোরিকশা চালক মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। আমরা প্রতিদিনই এসব অযান্ত্রিক যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। কোনো অনিয়মের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ জড়িত নই।
সুত্র: কালের কন্ঠ
আপনার মতামত জানান