ইউএনও’র বিরুদ্ধে নানামূখী ষড়যন্ত্র, জনমনে চাঁপা ক্ষোভ

প্রকাশিত


মানবতার সেবায় নির্ঘুম রাত আর অক্লান্ত ছুটে চলা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম ইতিমধ্যে সোনারগাঁবাসীর কাছে মানবতায় ইউএনও হিসেবে প্রসংশিত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ, কখনও গভীর রাতে নিজ হাতে ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের অসহায় মায়ের দ্বারে দ্বারে কড়া নাড়া ইউএনও সাইদুল ইসলাম দলমত নির্বিশেষে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।

অপরদিকে একদল দুর্নীতিবাজ, স্বার্থান্বেষী, ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল একাট্টা হয়ে তাকে বদলী করাতে নানান ধরণের অপপ্রচারে নেমেছে। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে রীতিমতো ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ইতিমধ্যে এক বছরে তিনজন ইউএনও’র বদলীকে সোনারগাঁয়ের উন্নয়ণ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন উন্নয়ণ বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউএনও শাহিনুর ইসলাম এডিসি হিসেবে বদলী হলে ১৪ ফেব্রুয়ারি অঞ্জন কুমার সরকার দায়িত্ব গ্রহনের ৮মাস পর ১১ নভেম্বর সোমবার তাকে প্রত্যাহার করে রাকিবুর রহমান খাঁনকে ইউএনও হিসেবে সোনারগাঁয়ে যোগদানের আদেশ দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যোগদানের তিনমাসের মধ্যে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুর রহমান খানকে প্রত্যাহার করে ১৮ ফেব্রুয়ারি মো. সাইদুল ইসলামকে নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। সাইদুল ইসলাম যোগদানের ২ মাস পর থেকেই তাকে বদলী করানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ২টি অভিযোগ দায়ের করার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ১১ জুন ইউএনও’র বাসাসহ উপজেলা প্রশাসনের ১৭টি সিসি ক্যামেরা বিকল করে ইউএনও’র কার্যালয় থেকে একটি মটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইউএনও’র বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার তিনমাস পর সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে চাঁদা দাবীর অভিযোগ করেছেন উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কবির হোসেন। ২৮ জুন রবিবার তিনি এই অভিযোগ করেন। এর আগে গত ২২ জুন মো. মোরশেদ নামের এক ঠিকাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুদকে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় সোনারগাঁয়ের জনমনে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ত্রাণ আত্মসাত ও সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গত ১২ এপ্রিল পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার কবির হোসেনকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ণ ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ (ইউনিয়ন পরিষদ-১ শাখা) সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে। নোটিশ পেয়ে কবির মেম্বার ১৩ এপ্রিল সাংবাদিক সম্মেলণ করে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ও ২১ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর কারন দর্শানোর নোটিশের জবাব প্রদান করেন। উভয়স্থানে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, ’ আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, বিত্তিহীন উদ্যেশ্যমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। পক্ষান্তরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অজুহাতে স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে একটি স্থার্থাম্বেষী মহলের এটি একটি অপপ্রচার ও অপ্রয়াস। গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার বিষয়টিও সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। কবির মেম্বার সংবাদ সম্মেলণ ও কারন দর্শানোর নোটিশের জবাবের কোথাও ইউএনও’র বিরুদ্ধে চাঁদাবাবীর কথা উল্লেখ না করলেও তিনমাস পর হঠাৎ ২৮ জুন তিনি দুদকে ২ লাখ টাকা চাঁদাবাদীর অভিযোগ করেন ইউএনও’র বিরুদ্ধে। দুদকের অভিযোগটিকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মনে করছেন সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন ।

অন্যদিকে ২২ জুন মোরশেদ নামের এক ঠিকাদার ইউএনও সাইদুল ইসলাম ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুনীর্তির অভিযোগ দায়ের করলেও মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন মোজাম্মেল নামের আরেক জন ঠিকাদারের। জানা যায়, চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মালামাল নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা (২৫,৫০০ টাকা) শহীদুল ইসলামকে নিলাম পাইয়ে দেয়। অভিযোগকারী মোরশেদ আলম নিলামে ২১ হাজার টাকা দর হাকিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার মো. মোজাম্মেল হক শর্তভঙ্গের অভিযোগ এনে বলেন, ‘দরপত্র আহ্বানের সময় ৩টি শর্ত ছিল। আমি দর দিয়েছিলেন ২১,০০০ টাকা। কিন্তু সর্বোচ্চ দরদাতা ২৫,৫০০ টাকায় নিলামটি পেলেও তিনি ব্যাংক ষ্ট্যাটম্যান্টের শর্ত পূরণ করেননি। এতে তার দরপত্র বাতিল হওয়ার কথা ছিল। অথচ, ইউএনও নিলামের পর শর্ত সংশোধন করে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই নিলামটি পাইয়ে দেয়। নিলামের পর শর্ত সংশোধন করতে পারে কি না? এ উত্তর জানতেই আমি দুদকে অভিযোগ করেছি।’

পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে ছুটে চলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। যতদিন আছি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবো। আমি সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে এসেছিমাত্র।’ এ সময় সকলের সহযোগিতা পেলে সোনারগাঁ উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কল্যাণে যা যা করার প্রয়োজন সেটি করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

দুদকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে আমি যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি নানামূখী ষড়যন্ত্রের শিকার হলেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবো। তাছাড়া মোজাম্মেল হক ও কবির মেম্বার আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের গুটি মাত্র। তার পিছনে একটি স্বার্থাম্বেষী মহল জড়িত।

আপনার মতামত জানান