সুস্থ হয়ে মায়ের কোলে সোনারগাঁ’র প্রথম করোনা আক্রান্ত আবু বক্কর

প্রকাশিত


আকাশে চাঁদ ঝলমল করলেও ঘর যেন অমাবশ্যার গাঢ় অন্ধাকার। অজানা ভয়ে নিথর ছিল আবু বক্করের মা-বাবা। কোন আলোয় আলোকিত করতে পারেনি তাদের। ঘরের চাঁদকে দূরে রেখে একবার আকাশের চাঁদের দিকে তাকাননি। অন্ধকারে খুজে ফিরেছে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত।

অবশেষে ফিরে এসেছে মা-বাবার একমাত্র সন্তান আবু বক্কর। গত ১৩ এপ্রিল ১৪ বছর বয়সে মরণব্যাধী করোনার অস্থিত্ব ধরা পরে তার শরীরে। সোনারগাঁয়ের প্রথম করোনা আক্রান্তের খবরে তার বাড়িতে ছুটে আসেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভ’মি) আল মামুন ও ডা. সজিব রায়হান। পুরো বাড়িতে লক ডাউন করে আবু বক্করকে নিজেদের দায়িত্বে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেন কুর্মিটোলা হাসপাতালে। সেখানে সে ১৭ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে আজ মায়ের কোলে ফিরে এসেছে। মা-বাবার কাছে এর চেয়ে বড় উপহার কি হতে পারে। আজ তাদের ঘরের চাঁদে দূর হয়েছে সকল অন্ধকার। মা-বাবার চোখে আনন্দের বন্যা হয়ে গড়িয়ে পড়েছে অশ্রু বিন্দু। আল্লাহ’র দরবারে অশেষ কৃতজ্ঞতার পর কৃতজ্ঞতা জানান উপজেলা প্রশাসনকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পলাশ কুমার সাহা জানান ১৭ দিনের চিকিৎসায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আবু বক্কর সিদ্দিক (১৪) এখন সুস্থ। উপজেলার প্রথম করোনা ‘পজিটিভ’ এই কিশোর শুক্রবার দুপুরে বাড়ি ফিরেছে। তিনি বলেন, কিশোর আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়ি উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামে। সোনারগাঁয়ে শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসেবে ৩০ জন শনাক্ত হয়েছে। উপজেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন।

মাদ্রাসার ছাত্র কিশোর আবু বক্কর সিদ্দিকের মা-বাবা উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার একমাত্র সন্তানের করোনা ধরার পর আমরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখেছি। কি করব ভেবে পাইনি। কিন্তু ইউএনও স্যার ফেরেস্তা হয়ে আমাদের কাছে দেখা দেন। তিনি আমাদের ছেলের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহন করেন। আমাদের ও আশপাশের কয়েকটি পরিবার লকডাউন করে নিয়মিত আমাদের খাবার পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। আজ বাড়িতে এসে আমাদের ছেলেকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন এবং সামনের দিনে কি করতে হবে সে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইউএনও সাইদুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর রহমতে আবু বক্কর সুস্থ হয়ে তারা মা-বাবার কোলে ফিরে এসেছে। আজ কতদিন পর আবার তার মায়ের চোখে মুখে উপচে পড়ছে হাসি। বাবার বুক থেকে মুছে গেছে দীর্ঘশ্বাস। আকাশের চাঁদ যে ফিরে পেয়েছে তারা! এ দেখতে পাওয়াও এক অন্য রকম ভালোলাগা। এভাবেই বিজয়ীর বেশে ফিরে ফিরে আসুক করোনা আক্রান্ত আমাদের বাকীরাও এ প্রত্যাশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে।

আপনার মতামত জানান