২০ লাখ প্রবাসীর মানবেতর জীবন যাপন
যে প্রবাসীদের পিাঠানো টাকায় বাংলাদেশের রেমিটেন্স সচল থাকতো করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এখন তারা বেকার। তাদের কাজ না থাকায় অর্থসংকটে পড়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানা গেছে।
গোটা বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। এই কর্মীদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, কোম্পানি পরিবর্তন করা অথবা কথিত ফ্রি ভিসার কারণে অনেক কর্মী আনডকুমেন্টেড বা অনিয়মিত হয়ে গেছেন।
বছর জুড়েই প্রবাসী কর্মীদের নানা সমস্যায় পড়তে হলেও, এবার করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মহাসংকটে পড়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। একদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া অন্যদিকে আয়-রোজগার বন্ধ।
বিশ্বের ২০৩ টি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। বাংলাদেশের প্রচলিত যে শ্রমবাজারগুলো রয়েছে তার প্রায় সবগুলোই এখন মোকাবিলায় ব্যস্ত এই ভাইরাসকে।
আমেরিকা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে বাংলাদেশি কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ অন্য দেশগুলোতেও করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের সকল শ্রমবাজারই এখন কার্যত লকডাউন। কর্মীদের কাজ বন্ধ, ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা।
এই পরিস্থিতিতে যেসকল কর্মীরা সরাসরি কোম্পানিতে নিয়োজিত ছিলেন, তারা মূল বেতন পাওয়ার আশা করছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, কাজ বন্ধ থাকলেও বিদেশী কর্মীদের মূল বেতন যেন নিশ্চিত করা হয়। তবে যে সকল কর্মী সরাসরি কোন কোম্পানিতে নিয়োজিত ছিলেন না, এজেন্ট বা কফিল এর মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্ত হয়ে বাইরে কাজ করতেন তারা আছেন অনিশ্চয়তায়। আর যাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই সেসব কর্মীদের অবস্থা একেবারেই করুণ।
মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, জর্ডান, কুয়েত ও বাহরাইনসহ প্রচলিত শ্রমবাজার গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসকল দেশে অন্তত ২০ লাখের মতো বাংলাদেশি কর্মী চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়তে পারেন আগামী সপ্তাহের মধ্যে। এ দেশগুলো প্রথম ধাপের ১৪ দিনের লকডাউন শেষ করে অনেক দেশই লকডাউন এর মেয়াদ এরইমধ্যে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ফলে প্রবাসী কর্মীদের হাতে থাকা টাকা-পয়সাও এরইমধ্যে শেষ। কাজ না থাকায় নতুন করে রোজগারের ব্যবস্থা নেই অনেকের। বিশেষ করে যারা অবৈধ কর্মী তাদের খাদ্য সংকট শুরু হয়ে গেছে এরইমধ্য। কারণ এই কর্মীরা দিন, সপ্তাহ বা মাস ভিত্তিক বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে থাকেন।
প্রবাসীদের খাদ্য সংকটের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সেলিম রেজা জানান,”সকল শ্রম উইংকে তাদের দেশে প্রবাসীদের খাবার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ জন্য কত টাকা বরাদ্দ লাগবে তা প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।”
বাংলাদেশের অন্যতম একটি শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে ১০ লাখের মতো বাংলাদেশি কর্মী আছে বলে তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই।। অর্থাৎ কোম্পানি পরিবর্তন করে অথবা ভিন্ন উপায়ে দেশটিতে গিয়ে অবৈধ হয়ে রয়েছেন। আবার অনেকেই আছেন বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে দেশটিতে কাজ করছেন। সবমিলিয়ে খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন এমন তিন লাখের মতো বাংলাদেশি কর্মী।
মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসীরা জানান, “করোনা ভাইরাসের কারনে এখন কাজ নাই তাই বেতন ও নাই। পকেটে যে টাকা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। আমরা খুব সমস্যার মধ্যে আছি আমাদের অনেকের হাতে টাকা পয়সা নাই কোম্পানির বাইরে কাজ করি বলে বেতন পাইনা।”
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম জানান, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। বিভিন্ন কোম্পানিতে ফোন করে কর্মীদের সাথে কথা বলছেন তারা।
বাংলাদেশের অন্যতম একটি শ্রমবাজার বা সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। দেশটিতে বৈধ কর্মীর পাশাপাশি কথিত ফ্রি ভিসায় অনেক কর্মী রয়েছেন। স্পন্সর বাড়ি থেকে ভিসা নিয়ে বাইরে ডেইলি ভিত্তিতে কাজ করেন অনেকেই। করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৌদি আরবের লকডাউন ঘোষণা করায় কাজ ও রোজগার ছাড়া রয়েছেন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী। ফলে টাকা না থাকায় খাবার সংকট দেখা দিয়েছে প্রবাসীদের মাঝে। জানাগেছে এমন নানা সমস্যায় থাকা অন্তত পাঁচ লাখ কর্মীর আগামী সপ্তাহ খাবার সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।
সৌদি প্রবাসীরা জানান, ” কাজ না থাকায় এখন একেবারেই করুণ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। এখন কাজ না থাকায় এক প্রকার না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে।”
সৌদি আবরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রবাসীদের পরিস্থিতি বিষয়ে দেশটিতে বাংলাদেশে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মেহেদি হাসান জানান, “এখনো সেভাবে খাবার সংকটের আশঙ্কা করছেন না তারা। তবে এই লকডাউন যদি আরো বাড়ানো হয়, তাহলে সংকট দেখা দিতে পারে। অনেকেই আমাদের সাথে এরইমধ্যে যোগাযোগ করছেন।”
মন্ত্রণালয়ে সহায়তার জন্য কোন প্রস্তাবনা দিয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নে মেহেদি হাসান জানান, “আমার একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করছি। শিগগিরই তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। এখনো যেহেতু সেভাবে সংকট পুরোপুরি শুরু হয়নি, তাই ভাবতে হচ্ছে।”
একই অবস্থা কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের সকল দেশে থাকা এমন বাংলাদেশি কর্মী। কাজ বন্ধ থাকায় বেতন না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রবাসীরা। এমন পরিস্থিতিতে তীব্র খাবার সংকটের আশঙ্কা করছেন তারা। করোনাভাইরাসের এই প্রভাবে আরো এক সপ্তাহ লকডাউন খাতলে অন্য বড় প্রতিটি শ্রমবাজারো লাখের ওপরে কর্মী তীব্র খাবার সংকটে পড়তে যাচ্ছেন বলে আশঙ্কা করছে এখাতের সাথে যুক্তরা।
প্রবাসীদের এই পরিস্থিতির বিষয়ে কথা হয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সেলিম রেজার সাথে। তিনি জানান, “একজন প্রবাসীও যাতে খাদ্য সংকটে না থাকেন সে বিষয়ে সবকিছু করছে মন্ত্রণালয়। আমরা সব শ্রম উইংকে নির্দেশ দিয়েছি, কোথায় কী ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সেটা নিতে হবে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
সেলিম রেজা জানান, ” এরইমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ( দুবাই) শ্রম উইংকে ২০ লাখ টাকা ও কাতারকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্য শ্রম উইংকেও চাহিদা দিতে বলা হয়েছে। আমরা প্রবাসীদের খাদ্য সরবরাহের জন্য সব কিছু করছি।”
সুত্র : প্রবাসী মেইল
আপনার মতামত জানান