মৃত্যুপুরী আনন্দ বাজার, ৪৯ বছরের খুনের ইতিহাস
ডেইলি সোনারগাঁ >>
এক সময়ের মৃত্যুপুরি হিসেবে চিহ্নিত আনন্দ বাজার এলাকা শান্ত হয় আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর। এর আগে সরকার ও গলুইয়া গোষ্টির দাঙ্গায় ১৯৭০ সাল থেকে শুরু হওয়া দাঙ্গায় মোট ২৭ জন খুন হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়। সামান্য কাওন (রবিশস্য) ক্ষেত গরুতে খাওয়া নিয়ে এ দাঙ্গার শুরু। তবে একই গোষ্টির নিজেদের মধ্যে জাকির হোসেন আনন্দ বাজারের ইতিহাসে প্রথম খুন। গত রবিবার জাকির হোসেন তারই বংশের চাচাত ভাইদের হাতে নিসংশভাবে খুন হন।
সরকার ও গলুইয়া গোষ্টির ভয়াবহ দাঙ্গায় এ পযন্ত ২৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে সরকার গোষ্টির ১২ জন ও গলুইয়া গোষ্টির ১২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাকির হোসেন সরকার বংশের নিজস্ব কোন্দলে খুন হয়েছেন। এছাড়া ১৯৭১ সালে খুন হন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মালেক, ১৯৮১ সালে মুক্তিযুদ্ধা মতিন এবং নিজের ভাতিজাদের হাতে নর্মিমভাবে খুন হন অনিল ঘোষ।
১৯৭০ সাল থেকে এ পযন্ত সরকার গোষ্টির যারা খুন হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিক্স মার্ডার।সরকার গোষ্টির নেতৃত্বে ছিলেন ইয়ানুস মেম্বার/মেন্দু সরকার। তাদের মৃত্যুর পর মোমেন সরকার, মাহবুব সরকারের নেতৃত্বে আসেন সরকার গোষ্টি।সিক্স মার্ডারে যারা নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন তারা হলেন :-
১। মতিউর রহমান সরকার ২। হুমায়ুন সরকার ৩। দেলোয়ার হোসেন সরকার ৪। সনমান্দী গ্রামের সাত্তার ৫। আঃরাজ্জাক ৬। মুজিব সরকার। জানা যায় ১৯৭৬ সালে জাসদের নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে তার খুন হন। একই বছর আব্বাস আলীর ছেলে ৭।সাইফান খুন হন।
এছাড়া খামার গাঁও গ্রামের সরকার গোষ্টির ওয়ারিশ মোল্লার ছেলে ৮। মজু মোল্লা, হাফেজ সরকারের ছেলে ৯। শাহজাহান সরকার, ১০। আলমগীর সরকার ১৯৭০ সালে একই দিনে খুন হন। জয়নব আলীর ছেলে ১১। শওকত আলী হত্যার পর নিজেদের কোন্দলে ১ ডিসেম্বর রবিবার মৃত শহীদুল্লাহ মেম্বারের ছেলে নবী ও নজরুলের হাতে নির্মমভাবে খুন হন নিরপরাধ ১২। জাকির হোসেন।
আঃ গফুর, সাহাদাত হোসেন মেম্বার ও বাছেদ মেম্বারে নেতৃত্বে চলে গলুইয়া গোষ্টি। ১৯৭০ সাল থেকে এ পযন্ত গলুইয়া গোষ্টির যারা খুন হয়েছেন তারা হলেন :-
পঞ্চবটির হাবিবুল্লার ছেলে ১। তাহের আলী (১৯৭২), দামোদরদীর ফকির মাহমুদের ছেলে ২। ইয়ানুস মেম্বার (১৯৭৫), একই দিনে ৩। নুরবক্স ও ৪। ফাইজদ্দিন (১৯৭৭) একই বছরে ৫। মান্নান, ৬। মান্নানের স্ত্রী, (৭,৮)। দুই সন্তানকে হত্যা করে পাটক্ষেতে ফেলে যায় হত্যাকারীরা। ১৯৮১ সালে ফকির মাহমুদের আরেক ছেলে ৯। নুরুল ইসলাম খুন হন। ইমানউদ্দিনের ছেলে ১০। আঃ গফুর, হাসান আলীর ছেলে ১১। রফিকুল খুনের পর গলুইয়া বংশে ২০১৭ সালে সর্বশেস খুন হন মিছির আলীর ছেলে ১২। সানাউল্লাহ। সানাইল্লাহ হত্যার আসামী যুবনেতা নবী হোসেন।
আনন্দ বাজার এলাকার সরকার ও গলুইয়া গোষ্টির একাধিক মুরব্বী জানান, যদি সরকার গলুইয়া দাঙ্গা না থাকত তবে আনন্দ বাজার এলাকার মানুস থাকত সবচে প্রভাবশালী ও অনেক সম্পদের মালিক। প্রতিটিা হত্যার পর হত্যাকারীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতো এ সুযোগে তৃতীয় পক্ষের লোকেরা বাড়িঘর লুটপাট করে হাজার হাজার টাকার মালামালসহ অনেক নগদ টাকা নিয়ে যেত। ্েরেপর কোটকাছারির পেছনে নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে টাকা ঢালতে হতো। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেতো। ঘুমাতে পারতাম না, বসতে, উঠতে পুলিশ ও প্রতিপক্সের হামলার ভয়ে সব সময় পালিয়ে বেড়াতে হতো। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ করছি, তারা যেন এ দাঙ্গা হাঙ্গামা তেকে সরে আসে। এলাকাকে শান্ত রাখার জন্য হিংসা, বিবেধ ভুলে একসাথে কাজ করে।
নিউজটি শেয়ার করুন…
আপনার মতামত জানান