স্বামীকে স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা ও কিছু কথা

প্রকাশিত

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে রিফাত শরীফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার ব্যাপারে কিছু লিখব ভাবতেই শরীর হিম হয়ে আসছে। এ ভাগ্য শুধু রিফাতের নয়, আমাদের সকলের। সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই আপনাকে মেনে নিতে হবে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে আপনার অবস্থা রিফাতের মতো হবে। প্রশ্ন করতে পারেন কেন? কেন আপনি জানেন না? আমার চল্লিশ ছুই ছুই বয়সে আমি দেখি নাই কোন হত্যা কারী ও ধর্ষণকারীর ফাসি হয়েছে। তবে ফাসির রায় হতে শুনেছি, পত্রিকায় পড়েছি। ফাঁসি কার্যকরের কথা শুনিনি। কেন? জানিনা। তবে রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর হতে দেখেছি। দেশদ্রোহীদের ফাঁসি দেখে উল্লাসিত হয়েছি।

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ঘটনা রাফি হত্যা। তদন্ত কমিটি, স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি। চলবে তো চলছে। কবে এর নিস্পত্তি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে হয়, আদালত ভালো জানেন। সাগর-রুনি, তনু হত্যা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন? তাদের বিচার কোন পথে?

সারা দেশের কথা নাইবা বললাম সোনারগাঁয়ে আসি। পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আলীর ছেলে রিপন, রিপনের হত্যাকারী সাধন, সাহাপুরের গোলজার ও সাধনের হত্যকারী মোহাম্মদ আলী হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ সরকারী ঠিকাদারী, হাট বাজারের ইজারা নিয়ে সাধারন মানুষকে হয়রানী করছে, চাঁদাবাজি করছে। সেদিন চৌরাস্তা ওভারব্রীজে মন্টু হত্যা মামলার আসামীকে দেখলাম বীর দর্পে হেটে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করতে জানতে পারলাম জামিনে এসেছে। খুনের আসামী জামিনে এসে খুন করলো আরেক খুনী মোহাম্মদ আলীকে। এরকম শতশত উদাহরন আছে। সব খুনিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কথা হলো দাড়িয়ে থাকা পথচারীরা কেন এগিয়ে আসবে। তাদের মধ্যে অনেকে আছে সাহসী। কিন্তু পরিবারের কথা ভাবলে তাদের সাহস শূন্যের কোটায় চলে আসে। কারন। কারন একটাই এই খুনিদের ধরিয়ে দিলে হ্যান্ডকাপ পড়া অবস্থায় পুলিশ ও হাজার হাজার মানুষের সামনে হুমকি দিবে, মাত্র কদিনের জন্য যাচ্ছি। জামিনে এস তোর কল্যাটা আগে কাটব। যেমনটি নুসরাত হত্যা মামলার আসামীরা আদালত পাড়ায় প্রকাশ্যে নূসরাতের ভাইকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তাহলে আপনি জেনে শুনে কেন যাবেন?

পত্রিকার মাধ্যমে জানলাম, বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর হোসেন মাহমুদ বলেছেন, ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানে পুলিশের সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে খুনিদেরকে শনাক্ত করেছি আমরা। তবে সময়মতো ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। অভিযান চলছে, সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হবে। আমরা জানিনা, তারা সময় মতো ঘটনাস্থলে আদৌ যেতে পারবে কিনা?

এ খুনের সাথে পুরো বাংলাদেশ জড়িত। আমি, আপনি, আমরা পুরো দেশ। শুধু এ খুন নয়, প্রতিটি হত্যা, ধর্ষণসহ প্রতিটি অপরাধের সাথে আমরা জড়িত। প্রথমে নিজেদের কথা বলি। আমরা নিজের কথা ভেবে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করি না। প্রতিটি অপরাধে দেখা যায় অপরাধী মাত্র কয়েকজন আর তামাসা দেখছে শতশত মানুষ। আরেকটি কথা না বললেই নয়, প্রযুক্তি নির্ভর অমানুষগুলি এখন হত্যার কি হয়েছে তার খবর নিবে না কিন্তু বার বার তার ধারনকৃত ফেবুতে পোষ্ট করা ভিডিওর কতটা লাইক শেয়ার হলো তা দেখবে।

নূরদ্দিন পাগলায় হাসতে হাসতে বলেছিলো, ভাই এ দেশে রোগী মারা যাওয়ার পরে ডাক্টার আর খুন হওয়ার পরে পুলিশ আসবেই। পাগল মানুষ তবু জানতে চেয়েছিলাম এমন কেন? নুরু পাগলা আমাকে বলেছিলো কউ মারা গেছে এ কথা বলার ক্ষমতা তো একমাত্র ডাক্টারের আপনার আমার না। ডাক্টার ডেট সার্টিফিকেট দিলে আপনি মরেছেন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। আবার জানতে চাইলাম তো পুলিশ। পাগলায় আমার জ্ঞানকে অবজ্ঞা করে বললো, গোবর মাথা নিয়ে সাংবাদিকতা করেন কিভাবে? পুলিশ না আসলে লাশের সুরুতহাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্ত করবে কে? খুনি কয়টা কোপ দিল, কোন কোপে কতটুকু ক্ষত হলো, চাকুর কোপ কয়টি, রামদার কয়টি, লোহার রডের বাড়ি কয়টি ইত্যাদি ইত্যিাদি। এর পরেই ব্যবসার শুরু বলে নুরু পাগলা হাসতে হাসতে অন্যদিকে চলে গেলো।

তারপর সমাজের বিবেকবান আইনজীবিরা কার আগে কে খুনির মামলার দায়িত্ব নিবে পাগল হয়ে যায়। ধর্ষণ ও মামলায় আসামীদের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যায় বেশী, তাই আইনজীবিরা তাদের আত্মীয়দের জামাই আদর করে। তারপর জজ-ব্যারিষ্টার। তাহলে কি দাড়াল, পুলিশ একজন আসামীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। দুদিন পর জামিন নিয়ে ঐ আসামী পুলিশকে বলে বলছিলাম না টাকা দেই ছেড়ে দাও। সততা দেখাও। রাখতে পারলানা আটকাইয়া। পুলিশ তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচে অসহায় মানুষের মাঝে খুজে পায়। একটা মাদক ব্যবসায়ী. ধর্ষক, খুনি পুলিশেরে বলে পারলে হাজতে রাইখ। দেখি কেমন বেডা অইছো।

সমাজ থেকে অপরাধ নিমূল করতে হলে আপনাকে, আমাকে সচেতন হতে হবে। প্রশাসনকে দায়িত্বশীল সৎ হতে হবে আইনজীবিদের শপথ করতে হবে ধর্ষন ,মাদক আর খুনির মামলায় তার লড়বেন না। ব্যাস অপরাধ নিমূল।

সবশেষে বলবো, রিফাত শরীফকে হত্যার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরা হয়তো হত্যায় সহযোগিতা করতেই সেখানে দাড়িয়েছিলো। যদি কউ খুনিকে প্রতিহত করতে আসতো তখন তারও অস্ত্র বের করতো। তারা সামনে দাঁড়িয়ে খুনিকে ঠেকাতে আসেনি দেখে দূরের কউও হয়তো সাগস করেনি এই ভেবে, সামনে থেকে যারা সাহস পাচ্ছে না আমরা কেন যাবো।

আপনার মতামত জানান