অলৌকিক ঘটনা। শাহপরান (রঃ) এর মাজার
শাহপরান (Shahporan) (রঃ) ছিলেন সুহরাওয়ার্দিয়া ও জালালিয়া তরিকার প্রখ্যাত সুফি সাধক। তিনি হযরত শাহজালাল (রঃ) -এর সাথে সিলেট অভিযানে অংশগ্রহণ করেন ১৩০৩ সালে এবং সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭ কিমি দূরে দক্ষিণ খাছ পরগনায় খাদিম নগরে খানকাহ স্থাপন করেন এবং তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করেন ।
হযরত শাহপরান (Shahporan) (রঃ) আত্বীয় সুত্রে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর ভাগনা মানে বোনের ছেলে । তবে আপন বোনা না আত্বীয় সম্পর্কে বোন তা পরিস্কার ভাবে জানা যায়নি। হযরত শাহপরান (Shahporan) (রঃ) বয়স যখন এগার বছর তখন উনার পিতা ইন্তেকাল করেন। পরবর্তিকালে তাঁর আত্মিয়, প্রখ্যাত সুফি-দরবেশ সৈয়দ আহমদ কবির (রহঃ) এর কাছে তিনি দ্বীনি ধর্ম শিক্ষা লাভ করেন
তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভের জন্য নেশাপুরের বিখ্যাত দরবেশ হযরত পাগলা আমীন (রহঃ) এর স্মরণাপন্ন হন এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষায় দীক্ষিত হন। হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) যখন বাংলাদেশে উদ্দেশ্যে যাত্রার উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি (শাহপরান (Shahporan) (রহঃ) খবর পেয়ে হিন্দু স্থানে এসে মামার সঙ্গী হয়ে ইসলাম প্রচারে অংশ নেন।
সিলেট অঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় শাহ পরানের ভূমিকা
সিলেট অঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় শাহ পরানের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। অদ্যাবধি তাঁর মাজার জিয়ারতের জন্য প্রতিদিন বহুলোক সমাগত হয়।মাজারের পাশে একটি গাছ আছে, গাছটির নাম ‘ আশাগাছ ’ । গাছের বিবিরন অনুযায়ী ডুমুর, আম ও অপর কোন জাতের গাছের সমন্বয়ে গঠিত বলে ধারনা করা হয়। রোগ নিরাময়ের জন্য ভক্তিভরে লোকজন ডুমুরের বীজ খায়।অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তবারক হিসেবে খাওয়া হয়।
মাজারের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন মসজিদ। ১৯৮৯-৯১ সালে মসজিদটির আধুনিকায়ণ করা হয়েছে। প্রায় ১৫০০ জন মুসলি এখন এখানে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।
শাহ পরাণের মাজার সিলেট শহরের একটি পুণ্যতীর্থ বা আধ্যাত্মিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি।এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কি.মি. দূরত্বে শাহ পরাণের মাজার অবস্থিত।
শাহ জালালের দরগাহর মতো এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হকসহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে।
শাহপরান-মাজার-গেইট
হযরত শাহপরান (Shahporan) (রঃ) এর মাজারের বর্ননাঃ
শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) এর দরগা শরীফের ন্যায় এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর বা ভক্তদের আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল এবং আরও অনেক ইতিহাসবীদের লেখা অনুযায়ী – “সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরা্ন (রহঃ) এর দ্বারা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাষ ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে।
খাদিমনগর এলাকায় টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নীচে রয়েছে শাহ পরা্ন (রহঃ) এর মাজার। মাজার টিলায় উঠা নামার জন্য উক্ত মাজার প্রাঙ্গনে দুটি উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি আছে। সিড়ীটি মোগল আমলে নির্মিত এবং ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু। পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাদের নির্মিত তিন গুম্বজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে।মসজিদে প্রায় পাঁচ শতাধিক মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন ।
মাজার টিলা থেকে প্রায় ১৫/২০ ফুট দহ্মিণ পশ্চিমে মহিলা ভক্তদের জন্য এক চালা বিশিষ্ট দালান ঘর রয়েছে। উক্ত দালানের অল্প পরিসর দহ্মিণ পুর্বে আরেকটি ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘরটি বিদেশাগত পর্যটকদের বিশ্রামাগার । এই ঘরের পাশে একটি পুকুর আছে , অজু এবং গোসলের জন্য ।
হযরত (Shahporan) শাহপরান (রঃ) এর অলৌকিক ঘটনাঃ
শাহ জালাল সিলেট আগমন কালে দিল্লী থেকে আসার সময় নিজামুদ্দিন আউলিয়া প্রদত্ত এক জোড়া কবুতর (সিলেটি উচ্চারণ-কৈতর) সঙ্গে আনেন। কবুতর জোড়া সিলেট নিয়ে আসার পর বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শাহ জালালের কবুতর বলে জালালী কৈতর নামে খ্যাত হয়। ধর্মীয় অনূভূতির কারণে এ কবুতর কেহ শিকার করতো না। শাহ পরাণ এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে, প্রতি দিন একটি করে কবুতর খেতেন। কবুতরের সংখ্যা কম দেখে শাহ জালাল অনুসন্ধানে মুল ঘটনা জেনে রুষ্ট হন।
একথা শাহ পরাণ জানতে পেরে গোপন করে রাখা মৃত কবুতরের পাক হাতে উঠিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন; আল্লাহর হুকুমে কবুতর হয়ে মামার কাছে মানে শাহ জালালের কাছে পৌছে যাও। সাথে সাথে পাক বা লোম গুলো এক ঝাক কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে যায়। শাহ জালাল ভাগিনেকে ডেকে বললেন; তোমার অলৌকিক শক্তি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি ।
কিন্তু এ ভাবে প্রকাশ্যে কেরামত প্রকাশ করা সঠিক নয়। সব মানুষের বুঝ শক্তি এক রকম হয় না। এ ভাবে কেরামত প্রকাশের কারণে মানুষ ভুল বুঝতে পারে বা আমাদের সম্পর্কে ভূল ব্যাখ্যা দিতে পারে। এরপর শাহ পরাণকে (রঃ) খাদিম নগর এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্য পাঠিয়ে দেন। শাহ পরাণ (রঃ) খাদিম নগরে ইসলাম প্রচারে তার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশখ্যাত ওলিকুল শিরোমণি হয়রত শাহজালাল ইয়ামনি (রহ.) ও হযরত শাহপরান (Shahporan) ইয়ামনি (রহ.) স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যভূমি সিলেটের আনাচে কানাচে রয়েছে অগণিত পর্যটন স্পট। জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, লালাখাল, ফাটাছড়া, পান্তুমাই মায়াবতি ঝর্ণা, পাহাড়টিলাময় মালনিছড়া চা বাগান, মাধবকুণ্ড জলপ্রভাত, চায়ের রানী শ্রীমঙ্গলের অবস্থানও সিলেট বিভাগে। সিলেট বিভাগের এসব পর্যটন স্পটে বছরজুড়েই ঢল নামে লাখ লাখ ভ্রমণ পিয়াসী পর্যটক দর্শণার্থীর। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের অপার ভাণ্ডার সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোকে স্রষ্টা যেন আপন হাতে সাজিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকবৃন্ধ সিলেট শহরে পৌছে প্রথমে দরগাহে হযরত শাহজালাল (রঃ) ও শাহপরান (Shahporan) (রঃ) এর মাজার শরিফ জিয়ারত করে পথ ধরেন প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে। শাহপরান (Shahporan) গেইট পার হয়ে কিছুদূর যাবার পর জালালাবাদ সেনানিবাস ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিঃ।
শাহপরান (Shahporan) গেইট থেকে হরিপুর পর্যন্ত গাড়িতে বসে বসে মহাসড়কের দু-ধারে সবুজ অরণ্য আর ছোট ছোট পাহাড় দেখে হৃদয়ে ভাল লাগার অনুভুতির উদ্রেক হয়। তখন মনে হয় ধিরে ধিরে যেন হারিয়ে যাচ্ছেন অচেনা কোন রূপকথার রাজ্যে। হরিপুর অতিক্রম করার পর, সাপের মতো আকা বাকা পিচ ঢালা পথ ধরে ক্ষেপা নদী ও মেধল হাওরসহ অন্যান্য হাওর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলার পথে মন হারিয়ে যায় দূরে বিলের জলে মিশে যাওয়া নীলাভ ওড়না জড়ানো আকাশের পানে।
আপনার মতামত জানান