কমিটি অনুমোদনে অনিয়ম, কেন্দ্রে জেলা আ’লীগের বিরুদ্ধে উপজেলা আ’লীগের লিখিত অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের তিন নেতা। গত সোমবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কায়সার স্বাক্ষরিত এ অভিযোগ দেন। এ অভিযোগের অনুলিপি দেন আওয়ামীলীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়–য়াকে। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কায়সার।
লিখিত অভিযোগে জানায়, ২০২২ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতারা অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে সহ-সভাপতি ও ও সাবেক সাংসদ আবদুল্লাহ আল কায়সারকে সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ সদস্য বিশিষ্ট সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষনা করেন। একমিটিকে ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেয়া হয়। নানা জটিলতার কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে বিলম্ব হয়। চলতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রস্তাবিত কমিটি ঘোষণা দেয় সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ। কমিটি গঠনে ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মতামত প্রধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির ১৮জন সদস্যকে নাম কেটে নতুন তাদের পছন্দ মতো নতুন ১৮জন অর্ন্তভূক্ত করে কমিটি অনুমোদন করে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের প্রকাশ করে। যা সাংগঠনিক শিষ্টাচার বর্হিভূত। এছাড়াও নতুন সদস্য অর্ন্তূভূক্তিতে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন। ফলে এ অনুমোদিত কমিটি তৃণমূল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অভিযোগে নেতারা আরো দাবি করেন, আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশ নেওয়া, ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাদের এ কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করে প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন দেওয়ার দাবি করেন।
আওয়ামীলীগের নেতাদের দাবি, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটি বাতিল করে মনগড়া মতো জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এ কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগে পদ পাওয়ার যোগ্য নয় এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জাতীয় পার্টির নেতা আলী হাসান মেহেদী সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও বিএনপি জমায়াত পরিবারের সদস্য মো.জসীমউদ্দিনকেও জেলার অনুমোদিত কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালেচনার ঝড় উঠেছে। কমিটি বাতিল করা না হলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী ও গণ পদত্যাগের হুশিয়ারী দেওয়া হয়।
এদিকে গত ৪ জুলাই রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহম্মদ শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করেন। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত কমিটি প্রকাশের পরই পদ বঞ্চিত নেতাসহ সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন বাদ পড়া ১৮ জনের মধ্যে জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাতের ছেলে সানজিত হাসনাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল হাই ভূঁইয়ার ছেলে আহসান হাবীব টিপু, মেঘনা শিল্পাঞ্চল শ্রমিক লীগের আহবায়ক তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম, নৌকা প্রতিকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল, সোনারগাঁ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি রফিকুল হায়দার বাবু, সোনারগাঁ পৌরসভা আওয়ামীলীগ নেতা কবির হোসেন, আতাউর রহমান আক্তারসহ অনেকেই বাদ পড়েছেন। তাছাড়া প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রশিদ ভূইয়াকে পদ পরিবর্তন করে সদস্য করা হয়েছে ও শহিদুল্লাহ মিয়াকে পদবঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে জেলা আওয়ামীলীগের ব্যক্তিরা লাভবান হলেও দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কায়সার বলেন, যাচাই বাছাই করে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে একটি প্রস্তাবিত কমিটি জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের কাছে প্রেরণ করেছি। সেই কমিটি অনুমোদন দেওয়া কথা। জেলা আওয়ামীলীগ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই তাদের প্যাডে একটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। তাদের কমিটি অনুমোদনে অনিয়ম হয়েছে। এ অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল বলেন, অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে নতুন পরীক্ষিত কিছু নেতাকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। কেন্দ্রে অভিযোগ দিলে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। তবে জাতীয় পার্টির নেতা ও আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড পর্যায়েও যাদের নাম নেই তাদের কোন দৃষ্টিকোন থেকে যাচাই বাছাই করা হয়েছে এ প্রশ্নের কৌশলে এড়িয়ে যান।
আপনার মতামত জানান