ডানা মেলল শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষার্থীরা
মহান বিজয় দিবসে বাঙালির প্রাণের আবেগের দিনটিকে ঘিরে আনন্দের শেষ নেই। বিজয়ের আমেজ বিরাজ করছে সারা দেশ। কিন্তু যাদের ঘরে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ থাকে না, তাদের কাছে বিজয়ের আনন্দ বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। মিরপুরের টিনশেড বস্তিতে এ রকমই কিছু ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে শুভসংঘ স্কুল।
দিনভর নানা আয়োজনে বিজয়ের আমেজে ভাসতে পিছিয়ে নেই স্কুলটির শিক্ষার্থীরা। বিজয়ের ৫১তম বছরে বিজয় দিবসের দিনটিতে তারাও আনন্দ-উচ্ছলতার ক্যানভাসে ডানা মেলে।
মহান বিজয়ের দিনটিতে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির দিনব্যাপী আয়োজন করে বস্তির স্কুলটিতে। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় বিজয় উৎসবের অনুষ্ঠানিকতা। সারা দিন শিক্ষার্থীদের সাথে গল্পে-আনন্দে-উদ্যাপনে মেতেছিলেন শুভসংঘ সদস্যরা। সকাল থেকেই শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গল্প, খেলা, কুইজ প্রতিযোগিতা এবং দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। শুভসংঘের ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে উচ্ছ্বসিত শুভসংঘ স্কুলের সকাল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
শুভসংঘ স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার। তার বাবা নেই। অসুস্থ মায়ের অর্থিক উপার্জনের ক্ষমতা নেই। মামা-চাচাদের সামান্য আর্থিক সহায়তায় তাদের সংসার চলছে। যেখানে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না, সেখানে পড়াশোনার সুযোগ তো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। তাসলিমা জানায়, ‘অনেক দিন ভালো খাবার খাই না। স্কুলের স্যার-আপা প্রতিদিন আমাদের খাবার দেন। আজকে বিজয় দিবসেও আমাদের অনেক ভালো খাবারের আয়োজন করেছেন। অনেক দিন পর পেট ভরে ভাত খেলাম। ’
আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ’র সিনিয়র সহসম্পাদক ও শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সুচিত্রা পূজা, শাহ্ মো. হাসিবুর রহমান হাসিব, লতা সরকার, রুবায়েদ হোসেন ফাবি, তাহসিন মাজেদ রামিম, আহাদুজ্জামান কুশল, ফারহান আমিন অমি, এস এম ইসফার, শেখ সুহাইল আহমেদ জাওয়াদ, মেহবার আলদ্বীন, শায়লা নুসমা, শাহানুর আলম, তাহমিদ আরেফিন সাজিদ, বিথি রায়, দিবা দেবনাথ, ইরিন জাহান প্রমুখ।
শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘শিশুরা হলো আমাদের আগামী। সামনের দিনকে সমৃদ্ধ করতে হলে সুশিক্ষিত শিশুর বিকল্প নেই। সমাজের সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে শুভসংঘ কাজ করে যাচ্ছে, যার আগ্রগতি আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে। বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে শুভসংঘের কার্যক্রমে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আগামীতে শুভসংঘের সদস্যরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, বিগত বছরগুলোতে কখনো এলাকার শিশুদের নিয়ে এমন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। শুভসংঘের মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে টিনশেড বস্তিতে। বিজয়ের দিনে এমন আয়োজন স্কুলের শিক্ষার্থী ও বস্তির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। আশা করি শুভসংঘের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ছেলে-মেয়েকে ভালো খাবার দেওয়ার সুযোগ হয় না। কিন্তু শুভসংঘ আমার ছেলে-মেয়েদের বিনা মূল্যে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি তাদের দৈনিক খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আজকে স্কুলের যে আয়োজন করা হয়েছে, তা আগে কখনো এই বস্তিতে হয়নি। ছেলে-মেয়েরা আজকে মন ভরে খেতে পেরেছে, তাতে আমরা সবাই খুশি।
আপনার মতামত জানান