ওমরাহ করছেন অনেকে বিশ্বকাপের অবকাশে
কাতার বিশ্বকাপের ‘হাইয়া’ কার্ড নিয়ে মক্কায় গিয়ে ওমরাহ পালন করেছেন অনেক মুসলিম। ভিসা খরচ ছাড়াই এ কার্ডধারীদের ওমরাহ পালনের সুযোগ দিয়েছে সৌদি সরকার। গত ১০ নভেম্বর থেকে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওমরাহ পালনের সুযোগ রয়েছে। বিশেষত খরচ কম হওয়ায় মধ্যম আয়ের মুসলিমরা এ সেবা গ্রহণ করছেন।
বিশ্বকাপের টিকিট নিয়ে সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে ওমরাহ পালন করেন মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানায়, আলজেরিয়ার সিদি বেল আবেস শহরের বাসিন্দা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। গত নভেম্বরে বিশ্বকাপের টিকিট কেনার পর কাতার থেকে ওমরাহ করতে মক্কায় চলে যান তিনি। ওমরাহ পালনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য ছিল কাতার থেকে সৌদি আরবে গিয়ে ওমরাহ পালন করা। যে দিন আমি জানতে পারি যে ‘হাইয়া’ কার্ড থাকলে সৌদি আরব ফ্রি ওমরাহ ভিসা দেবে সেদিন থেকেই আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল ওমরাহ পালন করা। বাজেট কম থাকলেও আমার মধ্যে তা নিয়ে ইতস্ততাবোধ ছিল না। আমি শুধু চাচ্ছিলাম কাতার পৌঁছে আমার ভ্রমণ শুরু করা। ’
বিশ্বকাপ ২০২২ দেখতে কাতার গমনকারী সবার জন্য ‘হাইয়া’ কার্ড বাধ্যতামূলক। এমনকি এই কার্ড ছাড়া কাতার প্রবেশেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে স্টেডিয়ামে প্রবেশ, মেট্রো ট্রেন ও বাসে বিনা মূল্যে আরোহণসহ বিভিন্ন সেবা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া বিদেশ থেকে আসা কার্ডধারীরা চাইলে টিটিকবিহীন তিনজন বন্ধুকে বিশ্বকাপ দেখতে আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। এর বিশেষ সুবিধা হলো, এই কার্ডধারীরা ভিসা ছাড়াই কাতার, সৌদি, ওমান ও আমিরাত যেতে পারবে। তাই বিশ্বকাপ চলাকালে বিদেশ যাত্রীদের মধ্যে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
আবদুল্লাহ জানান, আলজেরিয়া থেকে হজ এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহ করতে চাইলে খাবার ও অন্যান্য খরচ ছাড়াই অন্তত এক হাজার ডলার ব্যয় হয়। আর ‘হাইয়া’ কার্ড থাকলে আনুমানিক ব্যয় মাত্র পাঁচ শ ডলার। তাই ‘হাইয়া’ কার্ডধারী এক বন্ধুর আমন্ত্রিত ফেন (সমর্থক) হিসেবে কাতার যান আবদুল্লাহ। গত ১ ডিসেম্বর দোহায় রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সৌদি যাওয়ার জন্য আগে দোহায় আসা বাধ্যতামূলক নয়। তবে আলজেয়ার্স থেকে দোহা যাওয়ার খরচ কম হওয়ায় তিনি প্রথমে সেখানে আসেন। এরপর তিনি কাতার-সৌদি সীমান্তবর্তী সালওয়া রোড থেকে সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আল হফুফ পর্যন্ত প্রায় ৫৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে যান।
আবদুল্লাহ বলেন, ‘এরপর আমি আল হফুফ থেকে মক্কা যাওয়ার বাসে উঠি। তখনো আমি ক্লান্ত ছিলাম না; বরং বরাবরের মতো ইসলামের সম্মানিত স্থান পবিত্র কাবাঘর দেখার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলাম। বাসে ওঠার ৮ ঘণ্টার পর মক্কায় পৌঁছি। অল্প বাজেটে আমার এই ভ্রমণ মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু এর ফলাফল ছিল আনন্দের। ’
এদিকে ‘হাইয়া’ কার্ড নিয়ে কাতার থেকে মক্কায় গিয়ে ওমরাহ পালন করেছেন বাংলাদেশি আহসানুজ্জামান সুজন। এই কার্ড নিয়ে দুবাইও গিয়েছেন তিনি। সুজন বলেন, ‘গত ২৮ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর ফুটবল ম্যাচের দুটি টিকিট ক্রয় করি। তাই সৌদি আরব ভ্রমণ ও ওমরাহ পালনের মধ্যখানে আমি তিন দিনের ব্যবধান পাই। ’
কাতার থেকে সৌদি আরব যেতে ফ্লাইটে দুই ঘণ্টা এবং সড়কপথে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে তাঁর।
সুজন আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে সাধারণত দুই হাজার চার শ ডলার ব্যয় হয়। কিন্তু এখন আমার মাত্র এক শ ৫০ ডলার ব্যয় হয়েছে। এর বাইরে দোহা থেকে জেদ্দা যেতে অতিরিক্ত প্রায় দুই শ ডলার ব্যয় হয়। ভ্রমণটি আমার জন্য অবিস্মরণীয়। এবার আমি বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ দেখেছি ও মধ্যপ্রাচ্যের এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়েছি। তবে এত সহজে অল্প বাজেটে ওমরাহ পালনের সুযোগ আমার জন্য কিছু দুর্দান্ত মুহূর্ত নিয়ে এসেছে। ’
সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড
আপনার মতামত জানান