আলেমরা সমাজের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ

প্রকাশিত



ঐশী জ্ঞানের ধারক-বাহক আলেমরা মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর অনুগ্রহস্বরূপ। কেননা তাঁরা মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পরিচয় দান করেন। তাঁরা মানুষকে শরিয়তের বিধি-বিধান শিক্ষা দান করেন। তাঁদের জ্ঞানচর্চার কারণে ইসলামী শরিয়ত বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পায়।

ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে তাঁরা মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখেন। ফলে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা পায়। এ জন্য মহান আল্লাহ আলেমদের সম্পর্কে বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে আর যে অন্ধ তারা কি সমান? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেকবান ব্যক্তিরাই। ’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৯)

আলেমরা কেন আল্লাহর অনুগ্রহ? : আলেমরা মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক ও দ্বিনের সেবক। তাঁরা না থাকলে বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার পথরুদ্ধ হবে। নিম্নে আলেমদের বিশেষ কিছু অবদানের কথা তুলে ধরা হলো—

১. দ্বিনের শুদ্ধতা রক্ষা পায় : আলেমদের মাধ্যমে আল্লাহ দ্বিনের শুদ্ধতা রক্ষা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক আগত দলের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য মানুষই এই (ঐশী) জ্ঞান ধারণ করবে। তারা এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মনগড়া ব্যাখ্যা এবং অজ্ঞদের ভুল ব্যাখ্যা রোধ করবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২৪৮)

২. সত্যের ধারক : আলেমদের মাধ্যমেই আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সত্য দ্বিন ইসলামকে টিকিয়ে রাখবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত (অবিচল) থাকবে। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না; এমনকি এভাবে আল্লাহর আদেশ (কিয়ামত) এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটিই থাকবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৮৪৪)

৩. সত্যের সহযাত্রী : আলেমরা সর্বদা সত্যের অনুসরণ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, ফেরেশতারা ও জ্ঞানীরাও। আল্লাহ ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত, তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮)

৪. আল্লাহভীতির দৃষ্টান্ত : আলেমরাই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তারাই তাঁকে ভয় করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮)

৫. দ্বিন বুঝতে পারঙ্গম : আলেমরাই আল্লাহর দ্বিন বুঝতে অধিক পারঙ্গম। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো এর আগে কোনো কিতাব পাঠ করোনি এবং স্বহস্তে কোনো কিতাব লেখোনি যে মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে, বরং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে বস্তুত তাদের অন্তরে এটা স্পষ্ট নিদর্শন। কেবল অবিচারকারীরাই আমার নিদর্শন অস্বীকার করে। ’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৮-৪৯)

৬. দ্বিনের সংস্কারক : আলেমরা শুধু দ্বিনের ধারক নন, বরং তাঁরা প্রয়োজনে মুসলিম সমাজে সংস্কারকের ভূমিকা পালন করেন। নবী করিম (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মতের জন্য প্রতি ১০০ বছরের শিরোভাগে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যিনি এই উম্মতের দ্বিনকে তাঁর জন্য সঞ্জীবিত করবেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪২৯১)

সত্যপন্থী আলেম কারা? : কোরআন ও হাদিসের আলোকে সত্যপন্থী আলেমদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—

ক. দ্বিনের ওপর দৃঢ়তা : সত্যপন্থী আলেম সর্বদা দ্বিনের ওপর অবিচল থাকবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত কোরো না এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন কোরো না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪২)

খ. অন্যায়ের প্রতিবাদ : প্রকৃত আলেম সর্বদা ভালো কাজের আদেশ করেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন। নবীজি (সা.)-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে কখনো এমন কাজ থেকে পিছপা হন না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করো, অসৎ কাজের নিষেধ করো এবং আল্লাহে বিশ্বাস করো। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

গ. অনুসারীদের সংখ্যার প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন : সত্যের অনুসারী আলেমরা তাঁদের অনুসারীদের সংখ্যার প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন হন। তাঁরা অনুসারীদের সংখ্যা বাড়াতে সত্যের পথ থেকে সামান্যতম সরে যান না, বরং সত্যের ওপর অবিচল থাকেন। যদিও তাঁদের পেছনে কেউ না থাকেন।

ঘ. আল্লাহর সঙ্গে যুক্ত : প্রকৃত আলেমদের অন্তর আল্লাহর সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাঁরা আল্লাহর স্মরণ থেকে কখনো বিমুখ হন না। আল্লাহ বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে আর বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এটা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)

ঙ. বিদ্বেষ পোষণ করে না : সত্যপন্থী আলেমরা অন্য কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন না, তাঁরা সব মুমিনের প্রতি মমতা পোষণ করেন। বিশেষত পূর্বসূরি আলেমদের ব্যাপারে তাঁদের মনে বিদ্বেষ থাকে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রগামী আমাদের ভাইদের ক্ষমা করুন আর মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি দয়াশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১০)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

আপনার মতামত জানান