লণ্ডভণ্ড লাল-সবুজে মোড়ানো সবজিবাগান
সবজির সবুজ রঙের জমি দেখলে মনে হতো সবুজ কার্পেটে মোড়ানো। আর লাল শাকের জমি দেখে মনে হতো লাল কার্পেটে মোড়ানো জমি। কিন্তু সেই লাল-সবুজের কার্পেটে মোড়ানো জমিগুলো এখন চেনাই দায়। সোমবার রাতে সিত্রাংয়ের প্রভাবে মুন্সীগঞ্জে শীতের আগাম সবজির বেশির ভাগ মাঠ এখন বিনষ্ট।
অনেক সবজির মাচা ধসে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে শীতের সবজি, বিশেষ করে কপির বীজতলা। উঠতি রোপা আমন ঝড়ে নুয়ে পড়ে তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। মরিচ, মাষকলাই, খেসারির জমিসহ হেমন্তের নানা রকম ফসলের একই অবস্থা। যেসব জমিতে আগাম আলু আবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তা অন্তত দুই সপ্তাহ পিছিয়ে গেল।
kalerkanthoজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, অসময়ে এই ঝড়-বৃষ্টিতে শীতের আগাম সবজির ৩৮৭ হেক্টরের মধ্যে প্রাথমিক হিসাবে ১৯০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত। মরিচ, মাষকলাই ও খেসারির জমির ক্ষতি হয়েছে এক হেক্টর করে। থোড় এসে যাওয়া উঠতি রোপা আমনেরও অন্তত ২৬০ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে।
গতকাল মুন্সীগঞ্জ সদরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পান ও ধানের জমি বিনষ্ট। কোনো কোনো জমিতে কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের কাজ করছেন। কৃষকরা জানান, কৃষি অফিসের হিসাবের বাইরেও আবাদ করা প্রায় সব ফসল কমবেশি ক্ষতির কবলে পড়েছে। ফলে এবার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁদের।
মহাকালী গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, তাঁর রোপণ করা ফুলকপিসহ শাক-সবজি বিক্রির প্রায় উপযোগী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে সবই শেষ। আরেক কৃষক মহসিন শেখ বলেন, ‘এক লাখ টাকা খরচা করে মুলা, লালশাক, পালংশাকসহ নানা প্রকার সবজি আগাম করেছিলাম। এখন কিছুই আর বিক্রির যোগ্য নেই। ’ কৃষক রানা শেখ বলেন, ‘লক্ষাধিক টাকার শাক-সবজি আবাদ করেছি। অল্প কিছু রক্ষা পেলেও তার মান একেবারে খারাপ হবে। বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠবে না। দ্বিতীয়বার যে আবাদ করব সে টাকাও নেই। ’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, ‘রোপা আমন কিছুটা বাঁচলেও সবজির জমিতে পানি জমলে সবটাই পচে নষ্ট হবে। মুন্সীগঞ্জ স্পেশাল হিসেবে পরিচিত কপির বীজতলার ক্ষতি হয়েছে অনেক। এখনো এই ক্ষতির হিসাব হাতে আসেনি। তার পরও অনেক কৃষক আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ’
তিনি আরো জানান, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পুনর্বাসনের বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা কৃষকদের দেওয়া হবে।
আপনার মতামত জানান