আত্মহত্যার সময় যেখানে দাফনের কথা বলেছিলেন মহসিন

প্রকাশিত

চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর ও মডেল মুশফিকা তিনার বাবা আবু মহসিন খান ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। এ সময় তিনি তার অনেক মান-অভিমান আর কষ্টের কথা নিজ মুখে বলে যান। একই সঙ্গে তাকে কোথায় দাফন করতে হবে- সেই কথাও তিনি স্পষ্টভাবে বলে গেছেন।

ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, ‘আমি এখন চলে যাব। যারা আত্মীয়স্বজন আছো তারা জেনে রাখো। যেহেতু বাবাও জায়গাটা দেয় নাই। আমি যে কবরস্থানটা করেছি, সেখানে আমাকে দাফন কইরো না। আমাকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে যে একটা কবরস্থান (রায়ের বাজার কবরস্থান) হইছে, তোমরা আমাকে ওখানে দাফন করে দিও। এটাই আমার জন্য ভালো হবে। কারণ, প্রত্যেকটা লোক আমার সাথে প্রতারণা করেছে।’


ফেসবুক লাইভে পিস্তলের ম্যাগজিনে গুলি ঢুকাতে ঢুকাতে তিনি বলেন, ‘সবাই ভালো থাকো।’

এরপরই তিনি ‘কালেমা শাহদাৎ’ পড়তে শুরু করেন। তারপর তিনি বলেন, ‘ইয়া আল্লাহ্ তুমি কেন এতো কষ্ট দিলা।’

সবশেষে তিনি কান্না করতে করতে চশমা খুলে চোখের পানি মোছেন। আর বলতে থাকেন- ‘পৃথিবীটা খুব সুন্দর। সবাই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়। এই পৃথিবী ছেড়ে কেউই যেতে চায় না। তবুও, চলে যেতে হয়। হয়তো আমি আরও দুইদিন পরে যেতাম, সেটা হয়তো দুইদিন আগেই যাচ্ছি। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন প্লিজ।’

এদিকে আবু মহসিন খানের মরদেহ যেখানে ছিল, তার পাশেই বেশ কিছু নোট পেয়েছে পুলিশ। সেগুলো আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেছে তারা। এ ছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে মহসিন খানের লাইসেন্স করা পিস্তলটি। যেটির বৈধ কাগজপত্র তিনি নিজেই টেবিলের ওপর রেখে গিয়েছিলেন।

ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করা আবু মহসিন খানের লাশের পাশে রাখা একটি ‘সুইসাইড নোটে’ লেখা ছিল- ‘ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না।’

৫৮ বছর বয়সী আবু মহসিন খান পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি থাকতেন ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর ভবনে নিজের ফ্ল্যাটে। গতকাল বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ওই বাসা থেকে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এ খবর দ্রুতই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে আবু মহসিন খান একাই ছিলেন। বর্তমানেও ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলে সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন তিনি। যে পিস্তল দিয়ে তিনি নিজের মাথায় গুলি চালিয়েছেন, সেটি তার নামে লাইসেন্স করা। টেবিলের ওপর ওই পিস্তলের লাইসেন্স কপি রাখা ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান জানান, ২০১৭ সালে মহসিন খানের ক্যান্সার ধরা পড়ে। অসুস্থ হওয়ার পর ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তার দেনা-পাওনা ছিল। দেনাদাররা টাকা না দিয়ে তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করেছেন বলে জানা গেছে। এসব কারণে তিনি খুব হতাশ ছিলেন। তবে পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে এখনও আমাদের কথা বলার সুযোগ হয়নি।

শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে নায়ক রিয়াজ তার স্ত্রী তিনাকে নিয়ে বনানীর বাসা থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের রিয়াজ বলেছেন, এ মৃত্যুর বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে, তার সঙ্গেই তারা একমত পোষণ করবেন।

আবু মহসিন খানের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আবু মহসিনের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। বড় ছেলে তার মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।

মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙতে হয়নি। ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় ড্রইং রুমে একটি টেবিল আছে। মহসিন খান একটি চেয়ারে বসে ছিলেন। মোবাইলে লাইভ চলছিল। তার মাথার ডান পাশে গুলি লেগেছে।

ঘটনার সময় ওই ফ্ল্যাটে অন্য কেউ ছিলেন কি না জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ঘটনার সময় বাসায় কেউ ছিলেন না। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা ছিল। আমরা তদন্ত করে দেখেছি। বাড়ির প্রতিটি জায়গাতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। এখন পর্যন্ত বাইরের কোনো ব্যক্তির গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়নি।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আবু মহসিনের পরিবারের পক্ষ থেকে যে মামলা দেবে আমরা গ্রহণ করব। এখন বিষয়টি তার পরিবারের বিবেচনার বিষয়। পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা আইনগত সহযোগিতা করব।

আপনার মতামত জানান