রাজশাহীর হলুদ রপ্তানি হবে জাপানে
রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার আম রপ্তানি হয় অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে। আমের পর এবার বাঘা থেকে জাপানে হলুদ রপ্তানির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এরই মধ্যে জাপানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা নর্থ বেঙ্গল ফার্ম লিমিটেড ও বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েশনের মাধ্যমে হলুদ আমদানি করবে। এ বিষয়ে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গেও কথা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েশন রাজশাহীর অন্যতম সদস্য ও ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম ছানা বলেন, ‘বাঘা-আড়ানী অঞ্চলের হলুদ খুবই জনপ্রিয় এবং এর চাহিদাও ভালো। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এ অঞ্চলে হলুদের বেশ ভালো চাষাবাদ হয়। বর্তমানে হলুদের উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে। এ অঞ্চলের হলুদ বিদেশে রপ্তানি হলে এর ব্যপ্তি আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে আম রপ্তানি করার অভিজ্ঞতা থাকলেও হলুদ রপ্তানির অভিজ্ঞতা নেই। তবুও আশা করছি, হলুদ রপ্তানিতে ভালো সাড়া পাবো। রপ্তানি শুরু হলে এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য বদলের সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা।
উপজেলার আড়ানীর হলুদ ব্যবসায়ী একরামুল হক বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের হলুদের গুণগত মান খুব ভালো। তাই চাহিদাও বেশি। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ অঞ্চলের হাট থেকে হলুদ চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে এক মণ শুকনা হলুদ সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যদি এ অঞ্চলের হলুদ বিদেশে রপ্তানি হয় তাহলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো। হলুদ বিদেশে রপ্তানি হলে চাষিরা যেমন হলুদ চাষে উৎসাহিত হবে তেমনি ভালো লাভও পাবে।
বাঘা উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্যমতে, গেলো বছরে বাঘায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। তবে এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন। বাঘায় গাঙ্গীয়া, সোনামুখী, ডিমলা বারি-১ জাতের হলুদ চাষ হয়। গাঙ্গীয়া জাতের হলুদের ভালো ফলন হয়। এই জাতের হলুদ আকারে মোটা এবং রঙ অন্যান্য হলুদের তুলনায় অনেকগুণে ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে ৪৫ থেকে ৫০ মণ হলুদ উৎপন্ন হয়। হলুদ চাষে জৈবসার ব্যবহারে খরচও হয় খুব কম। বিঘা প্রতি সার ও বীজসহ খরচ হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির কাঁচা হলুদ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আড়ানী এলাকার হলুদের বেশ সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। কারণ, উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদী। এ নদীর কারণে এই অঞ্চলের জমিতে বৃষ্টির পানি জমে না। আর এ কারণে হলুদের ফলনও বেশ ভাল হয়।
তিনি বলেন, ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদ চাষ ভালো হয়। তাছাড়া এক জমিতে ফল ও হলুদ দুটোই চাষ করা যায়। সরকারিভাবে বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হলে আগামীতে অনেকেই হলুদ চাষে আগ্রহী হবে।
আপনার মতামত জানান